Can't find our books? Click here!
প্রস্তরযুগ থেকে স্ক্রিনওয়ার্ল্ড

প্রস্তরযুগ থেকে স্ক্রিনওয়ার্ল্ড

AH lehn

ডেনিয়েল ডেনেট তার “Darwin’s Dangerous Idea: Evolution and the Meanings of Life” নামক একটি গ্রন্থে বলেছিলেন, মানুষের বিবর্তন মহাবিশ্বের অপরিহার্য কোনো ঘটনা নয়। যদি ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে মহাজাগতিক গ্রহাণু যেটি ডায়নোসরদের খুন করেছিল সেটি পৃথিবীকে মিস করত তবে, স্তন্যপায়ী জীবরা প্রাইমেট ও মানুষে বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পেত না। আজ এ বিশ্ব হতো ডায়নোসরদের রাজত্ব। মানুষ একটি মহাজাগতিক অ্যাক্সিডেন্ট ছাড়া কিছুই নয়!
বিলিয়ন বিলিয়ন টুকরার একটি পাজলের কথা কল্পনা করুন কিন্তু আপনাকে গাইড করার জন্য বাক্সে কোনো ছবি নেই। প্রতিটি টুকরো একটি জীবের বৈশিষ্ট্য ও বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতাকে রিপ্রেজেন্ট করে। প্রাকৃতিক নির্বাচন একটি ফোর্স হিসেবে কাজ করবে কোন টুকরোটি সফল হবে এবং কোন টুকরোটি সফল হবে না। সময়ের সাথে সফল টুকরোগুলো সমন্বিত ও পুনরায় সমন্বিত হয়ে নতুন প্যাটার্ন তৈরি করবে ও অসংখ্য খন্ড নিয়ে গঠিত একটি পাজলের মতো একসাথে একটি বিগ পিকচার তৈরি করবে। যাইহোক, পাজলের নিজের পূর্বনির্দিষ্ট কোনো ছবি অথবা ডিজাইন নেই। আমরা যখন পিছিয়ে যাই এবং সম্পূর্ণ ধাঁধার দিকে তাকাই তখনই আমরা দেখতে পাই একটি প্যাটার্ন ফুটে উঠেছে। ডেনেট বলেন, একইভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নেই। এটি সরলভাবে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করে এবং বিশেষ পরিবেশে কোনো একটি জীবের টিকে থাকা ও প্রজননের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে! এজন্য জীববিজ্ঞানে ডিজাইনের ধারণাটি আমাদের পূর্ববর্তী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৃষ্ট একটি ইল্যুশন মাত্র! আমাদের কেউ ডিজাইন করেনি! অসংখ্য ভুল আছে আমাদের অস্তিত্বের!


কল্পনা করুন একটি গ্র্যান্ড কনটেস্টের কথা যেখানে বিশ্বের সকল জীব অংশগ্রহণ করেছে। যেখানে প্রতিটি জীব তাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম সফলতার “শিরোনামের” জন্য প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু এখানে একটি সীমা আছে: কোনো বিচারক নেই, কোনো মানদণ্ড নেই, কোনো পুরস্কার নেই! এ কনটেস্ট খুব সরল ভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত, প্রতিটি জীব তাদের টিকে থাকা ও প্রজননের জন্য সবচেয়ে সেরাটা দিচ্ছে। এই কনটেস্টে, মানুষ অসংখ্য প্লেয়ারের মধ্যে একজন। যদিও তাদের অনন্য দৃঢ়তা আছে, বুদ্ধিমত্তা আছে এবং আছে পরিবেশকে পরিচালনা করার ক্ষমতা কিন্তু একইসাথে তাদের আছে হাজার হাজার হাড় শীতল করা দূর্বলতা। উদাহরণস্বরূপ, তারা বিভিন্নপ্রকার রোগের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং তাদের টিকে থাকার জন্য উচ্চমাত্রিকভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু কন্ডিশন ফিক্স করা হয়েছে যার বাহিরে তারা সার্ভাইভ করতে পারে না! চিন্তা করে দেখুন, তেলাপোকা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর টিকে আছে চরম তাপমাত্রা ও মহাজাগতিক রেডিশন সহ্য করে এবং টার্ডিগ্রেড নামক একটি জল ভাল্লুক সমুদ্রের অতল গভীর থেকে শুরু করে মহাকাশের চরম পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে! আর তাই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম জীব এটি একটি হিউম্যান সেন্ট্রিক ধারণা এবং এটাকে অবজেক্টিভলি পরিমাপ করার কোনো সুযোগ নেই কারণ প্রতিটি জীব যার যার নিজস্ব পরিবেশে দুর্দান্তভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
মানুষের দেহ বিবর্তিত হয়েছিল মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পূর্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য। যাইহোক, আজ আমরা যে স্ক্রিনওয়ার্ল্ডে বাস করছি সেটি আমাদের পূর্বসূরীদের বিশ্ব থেকে আলাদা। এটি এমন একটি কন্ডিশন তৈরি করেছে যেটাকে জর্জ সি উইলিয়াম তার ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত “Adaptation and Natural Selection: A Critique of Some Current Evolutionary Thought” বইতে ইভোলিউশনারী মিসম্যাচ বলে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। এরপর আমরা স্টিভেন পিঙ্কার,জ্যারেড ডায়মন্ড,ম্যাট রিডলি, এডওয়ার্ড উইলসন, ডেনিয়েল ডেনেট, রিচার্ড ডকিন্স, রোনাল্ড গিফার্ট, বয়ড ইটন, মার্জরি শোস্তাক ও মেলভিন কনার প্রমুখের কাছ থেকে জানতে পারি, আমাদের দেহ যে আদিম পরিবেশে বিবর্তিত হয়েছিল ও আমরা বর্তমানে যে আধুনিক বিশ্বে বাস করি_এ দুটি বিশ্ব ডিসকানেক্ট কারণ আমাদের জিনোম আধুনিক বিশ্বের সাথে অভিযোজিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি!


এ ধরণের মিসম্যাচ অথবা ডিসকানেকশনের একটি উদাহরণ আমরা দিতে পারি রোনাল্ড গিফার্টের সাম্প্রতিক লেখা “Mismatch: How Our Stone Age Brain Deceives Us Every Day” নামক মাইন্ড ব্লোয়িং একটি বই থেকে। এ বইতে গিফার্ট চিন্তা উস্কানীমূলক খুবই শক্তিশালী একটি মিসম্যাচ উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স বিবর্তিত হয়েছিল দ্রুতগতিতে চূড়ান্ত হুমকিগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য যেমন প্রিডেটর অথবা শিকারী প্রাণীর উপস্থিতি। যাইহোক, আধুনিক বিশ্বে, আমরা ক্রোনিক স্ট্রেসরের শিকার হচ্ছি যেমন কাজের প্রেসার, অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ওভারলোড, যা আমাদের স্ট্রেস রেসপন্স অ্যাকটিভেট করে, আমাদের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
ইভোলিউশনারী মিসম্যাচ সম্পর্কে খুবই আশঙ্কাজনক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় অ্যাডাম হার্টের মাইন্ড ব্লোয়িং বই “Unfit for purpose” থেকে। এ বইতে তিনি বলেছিলেন, অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া ও মানুষ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সহ-বিবর্তিত হচ্ছে। তাদের এ সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। ব্যাক্টেরিয়া আমাদের পূর্বসূরীদের টিকে থাকা ও কল্যাণে সহযোগিতা করেছিল খাবার পরিপাক, ভিটামিন সংশ্লেষণ এবং ইমিউন সিস্টেম মডিউলেট করার মাধ্যমে। যাইহোক, আমাদের আধুনিক বিশ্ব পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে বিশেষ করে আমাদের খাবার, যা আমাদের অন্ত্রের ইন্টারনাল ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করে দিচ্ছে যেটি মডার্ন লাইফস্টাইলের সাথে আমাদের আদিম বায়োলজির একটি মিসম্যাচ। আমাদের মডার্ন-ডায়েট মূলত প্রসেস ফুড, সুগার ও সম্পৃক্ত চর্বি দিয়ে পূর্ণ যা আমাদের অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াল প্রজাতিদের ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, উপকারী ব্যাক্টেরিয়া হ্রাস করছে এবং ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি করছে। গাট মাইক্রোবায়োমের এই ট্র্যানজিশন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে জড়িত যেমন স্থুলতা, ডায়বেটিস ও প্রদাহ। আজকের বিশ্বে আমাদের ইমিউন সিস্টেম মাইক্রোবায়োমের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কহীন যা আমাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং অটোইমিউন ডিজিজ তৈরি করছে।
২০১৭ সালে “Phi Beta Kappa” পুরস্কার প্রাপ্ত রডনি ডায়েটার্টের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই ছিল “The Human Superorganism: How the Microbiome Is Revolutionizing the Pursuit of a Healthy Life”। সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক টাইম এ বইটির ওপর গুড রিভিউ দিয়েছিল। এ বইতে লেখক বলেছিলেন, স্ক্রিনওয়ার্ল্ড প্রাকৃতিক বিশ্বের মাইক্রোব বা জীবাণু থেকে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের দূরত্ব তৈরি করছে। আমরা এখন বেশিরভাগ সময় ইনডোরে থাকি কিন্তু মাইক্রোব থাকে আউটডোর এনভায়রনমেন্টে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আমাদের দেহ সহাবস্থান করেছিল বৈচিত্র্যময় জীবাণুর সাথে, যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন ও তার ফাংশন উন্নত করেছিল। যাইহোক, আর্টিফিশিয়ালি নিয়ন্ত্রিত ইনডোর এনভায়রমেন্ট জীবাণুর সাথে আমাদের সংস্পর্শ নষ্ট করে দিচ্ছে এবং এতে করে আমাদের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাডাম হার্ট তার “Unfit for purpose” বইতে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া সম্পর্কে খুবই মাইন্ড বেন্ডিং ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। ১৯৮০ সালে বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন ব্যাক্টেরিয়া স্ট্রেইন দেখা যায়। এই নতুন স্ট্রেইন ছিল খুবই মারাত্মক যা ডেল্টা রিজিয়নে মহামারী তৈরি করেছিল। এ সমস্যাটির কারণ ছিল স্থানীয় জনগণের দেহে “Vibrio cholera” নামক নতুন স্ট্রেইনের বিপক্ষে কোনো ইমিউনিটি ছিল না কারণ তারা কেবল পূর্বের স্ট্রেইনের সাথে পরিচিত ছিল। এ এপিডেমিক হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটায়। আর এ দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বুঝতে পারি আর্টিফিশিয়াল ইনডোর এনভায়রমেন্ট আমাদের বিবর্তনীয় অতীতের সাথে একটি বোন চিলিং মিসম্যাচ!
স্টিভেন পিঙ্কার তার “The Blank Slate: The Modern Denial of Human Nature” নামক বইতে চূড়ান্তভাবে বিতর্কিত চিন্তার মিসাইল ছুঁড়ে দিয়েছিলেন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে! তিনি দাবি করলেন, আফ্রিকার জঙ্গলে আমাদের আদিম পূর্বসূরী শিশুরা তাদের জেনেটিক্যাল প্রবণতা অনুযায়ী প্রকৃতিকে এক্সপ্লোর করেছিল যার সাথে আমাদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা অসঙ্গতি তৈরি করতে পারে কারণ জিনগতভাবে যে শিশুটি ম্যাথম্যাটিক্সে পারদর্শী তার ওপর হয়তো কখনো ইকোনোমিক্স চাপিয়ে দেয়া হয়! যা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক মানসিক ও শারীরীক স্বাস্থ্য সমস্যা জন্ম দিতে পারে!
আবার জেয়ার্ড ডায়মন্ড তার “The Third Chimpanzee” নামক বিখ্যাত গ্রন্থে একটি অনন্য, বিতর্কিত ও চিন্তা বিস্ফোরণকারী কনসেপ্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, মানুষের অনেক দীর্ঘকালীন একটি রেকর্ড আছে বিধ্বংসী মানসিকতার! মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিশাল সব জীব বিলুপ্ত করে দিয়েছে যেমন ম্যামথ ও জায়ান্ট গ্রাউন্ড স্লথ। আর তারা ভয়াবহ কাজটি করেছে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে! মানুষের এ অতিরিক্ত ভোগের প্রবণতা এতটাই আগ্রাসী যে তারা মুহূর্তের আনন্দের জন্য কোনোপ্রকার দীর্ঘকালীন প্রভাবের কথা চিন্তা না করেই অ্যামাজন ফরেস্ট ধ্বংস করে দিচ্ছে খনি অনুসন্ধান, লগিং ও কৃষি বিস্তারের মাধ্যমে! তারা জলবায়ুকে এমনভাবে বদলে দিয়েছে, আজ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!
জেয়ার্ড ডায়মন্ড বলেন, মানব ইতিহাসের বিশাল একটি সময় ধরে খাবার ও অন্যান্য সম্পদের সাপ্লাই ছিল খুবই দূর্লভ এবং যে সকল ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে কোনোকিছু অর্জন করতে পেরেছিল অথবা অত্যধিক সম্পদ ভোগ করেছিল, তারা সে সকল মানুষ থেকে বেশি উপযোগিতা পেয়েছিল যারা অল্পে তুষ্ট! প্রাকৃতিক নির্বাচন আদিম সময় তাকেই আনুকূল্য দিয়েছিল যে সংক্ষিপ্ত সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ সম্পদ ভোগ করতে পারে আর সেই আদিম শর্ট-টার্ম ভোগের প্রবণতা আজও আমাদের মধ্যে জেনেটিক পর্যায়ে খোদিত হয়ে আছে।
আজকের বিশ্বে আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ থাকার পরও আমরা নিজেদের শূন্য মনে করি। আমাদের আদিম গুহা জীবনের প্রাকৃতিক স্ট্রেসর দীর্ঘকালীন উপযোগের কথা চিন্তা না করে সংক্ষিপ্ত সময়ে অতিরিক্ত ভোগ করার যে প্রবণতা আমাদের মস্তিষ্কে জন্ম দিয়েছিল সে প্রবণতার বশবর্তী হয়ে আজ আমরা বিশ্বের সমুদ্র, হিমালয় এবং জলবায়ু বিপর্যস্ত করে তুলি! সম্পূর্ণ প্ল্যানেট আমাদের হাতে তুলে দিলেও আমাদের দারিদ্রতা শেষ হয় না কারণ আমাদের অবচেতন মন এখনো সে সময়ে পড়ে আছে যখন খাবার ও সম্পদ ছিল সীমাবদ্ধ! আমাদের শাশ্বত দারিদ্র্যতা জিনগতভাবেই খোদিত!
সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত ও ভীতিকর একটি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল বয়ড ইটন, মার্জরি শোস্তাক এবং মেলভিন কনার যৌথভাবে লেখা “The Paleolithic Prescription: A Program of Diet and Exercise and a Design for Living” নামক বিখ্যাত এ বইটিতে। প্যালিওলিথিক প্রেসক্রিপশন আমাদের সাজেস্ট করছে, আমাদের সে সকল খাবার খাওয়া উচিত যে সকল খাবার আমাদের আদিম পূর্বসূরী শিকারী সংগ্রাহকরা খেয়েছিল যেমন চর্বিহীন মাংস, ফল এবং সবজি এবং আমাদের মডার্ন ফুড ত্যাগ করা উচিত কারণ আমাদের দেহ শস্য এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মতো খাবার হজম করার জন্য বিবর্তিত নয়। এই ধারণা তীব্রভাবে বিতর্কিত কারণ প্যালিওলিথিক ফুড সাজেশন আমাদের মেইনস্ট্রিম বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্যকর খাবার সংক্রান্ত ফুড রেসিপি অস্বীকার করে!
ইভোলিউশনারী মিসম্যাচের চরম উদাহরণগুলোর মধ্যে আর একটি বোন চিলিং উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ডেনিয়েল ডেনেটের গ্রাউন্ড ব্রেকিং বই “Darwin’s Dangerous Idea: Evolution and the Meanings of Life” থেকে। ডেনিয়েল ডেনেট বলেন, আমাদের নৈতিক সেন্স বিবর্তিত হয়েছিল প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সামাজিক ঐকতান তৈরি করার জন্য , সে সময় যখন আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বাস করেছিলাম যেমন পরিবার অথবা ট্রাইবস। যাইহোক, আধুনিক সমাজ জটিল ও বৈচিত্র্যময়, যেখানে আমাদের নৈতিক সজ্ঞা ও মূল্যবোধ খুবই অদ্ভুত যা বিভিন্ন নৈতিক উভয়সংকট ও দ্বন্ধ জন্ম দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, আমাদের নৈতিক সেন্স আমাদের বলছে, অন্য কাউকে হত্যা করা ক্ষতিকর ও অন্যায় কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতি যেমন সেলফ ডিফেন্স অথবা যুদ্ধের সময় অন্য কাউকে হত্যা করা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও অপরিহার্য। এছাড়া, আমাদের নৈতিক সেন্স নিজের আত্মীয়কে কোনো একজন আগন্তুক থেকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়, কিন্তু বিশ্বায়নের এ বিশ্বে, আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে অন্যান্য মানুষের সাথে সংযুক্ত যারা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ব্যাকগ্রাউন্ড শেয়ার করে যা আমাদের মাঝে নৈতিক টেনশন ও মতানৈক্য জন্ম দেয়।
আমি এ বইটির পাশাপাশি আর একটি বই লিখেছিলাম “সায়ানোব্যাক্টেরিয়া থেকে সাইবারসেক্স: মানব সভ্যতার যৌনতার বোধগম্য ইতিহাস ও ভুল” । এ বইটিতে আমি আদিম সমুদ্র থেকে এ পর্যন্ত সেক্সের বিবর্তন, নারী পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্য ও মস্তিষ্কের গঠন প্রণালীর ভিন্নতার সাথে সম্পৃক্ত ল্যাটেস্ট থিওরিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মূলত দেখানোর চেষ্টা করেছি, সেক্স, জেন্ডার ও ভালোবাসা সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান ও মানব সংস্কৃতির একটি বিগ মিসম্যাচ! এছাড়া আমাদের আদিম সেক্স ও ভালোবাসার বায়োলজির সাথে স্ক্রিনওয়ার্ল্ড যে ডিসকানেকশন তৈরি করেছে তার প্রভাব ও সম্ভাব্য ফলাফল!
আমি এ বইটিতে আমাদের আদিম অ্যানাটমি, বায়োলজি, নিউরোবায়োলজি ও সাইকোলজির সাথে স্ক্রিনওয়ার্ল্ডের শতাধিক মিসম্যাচ তুলে ধরেছি। প্রথমে এ বইটির আকার ১০০০ পেজে গড়ালেও আমি সেটাকে রিফাইন করে ৪৭০ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছি। আমি দেখিয়েছি কীভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম আজ স্ক্রিনওয়ার্ল্ড থেকে আসা মানসিক স্ট্রেসরকে রেসপন্স করতে গিয়ে বিভিন্ন জটিল শারীরীক রোগের জন্ম দেয়। কীভাবে ধর্ম,বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্য কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, হৃদরোগ অথবা ইমিউন ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে। কীভাবে সামাজিক অনুক্রমে নিন্ম পর্যায়ের মানুষগুলো স্থুলতা ও বিভিন্ন জটিল মানসিক রোগের শিকার হচ্ছে। কেন ম্যাজিক আমাদের প্রতারিত করে? কেন আমরা বিভিন্ন জ্ঞানগত পক্ষপাতের শিকার হই? আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন কীভাবে ফেসবুক রিভিনিউ বৃদ্ধি করতে গিয়ে মানব সভ্যতাকে ধবংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে? কীভাবে মেডিটেশন আমাদের বিবর্তনীয় অতীত ও আধুনিক বিশ্বের মাঝে একটি মিসিং ব্রিজ তৈরি করতে পারে!
সবশেষে আমরা একটি বোন চিলিং সম্ভাবনা উন্মোচন করেছি যা আজকের স্ক্রিনওয়ার্ল্ডে খুবই ভাইব্রেশনাল একটি প্রসঙ্গ, আর এটি ছিল একটি প্রশ্ন এক্সপ্লোর করার মধ্য দিয়ে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার ও মাইন্ড অ্যান্ড মেশিন ইন্টারফেস কী মানব সভ্যতাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রজাতিতে পরিণত করে দিচ্ছে, যে নতুন প্রজাতির সম্ভাব্য নাম হতে পারে “ইভলভাইট”? আমরা কী তবে হোমো ইরেক্টাস থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স আর চূড়ান্তে ট্রানসেন্ডিস্যাপিয়েন্স অথবা ইভলভাইটে পরিণত হতে চলছি?

আরও পড়ুন: From Stone Age to Screenworld

বইটি সংগ্রহ করতে যোগাযোগ করুন: হাইপারস্পেস