বিবর্তনকে মিথ্যা প্রমাণ করা খুবই সহজ। একটা পারমাণবিক বোমা মেরেই আপনি বিবর্তনকে উড়িয়ে দিতে পারবেন! আর সেটা হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকার জঙ্গলে কোনো টেলিভিশন, আইফোন অথবা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ছিল না। তার মানে, আমাদের মস্তিষ্কের পক্ষে আইফোন এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটির কনসেপ্ট বোঝা অসম্ভব। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক স্ক্রিনের জন্য অভিযোজিত হয়নি!
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন আমরা স্ক্রিনবিশ্বকে বুঝি? তার মানে বিবর্তন মিথ্যা একটি থিওরি। কিন্তু আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন, আপনার ব্রেন আসলেই টেলিভিশন, কম্পিউটার অথবা আইফোনের কনসেপ্ট বোঝে না। বিশ্বাস করুন, আসলেই সে কোনটা স্ক্রিন আর কোনটা স্ক্রিন নয়, সেটা আলাদা করতে পারে না। কেন আলাদা করতে পারে না? সাভানা প্রিন্সিপল অনুসারে, আমাদের ব্রেন স্ক্রিন ও রিয়ালিটিকে আলাদা করতে পারে না কারণ আমাদের ব্রেন এখনো প্রস্তরযুগে বাস করে। রেডিও, টেলিভিশন, আইফোন অথবা কম্পিউটার ইত্যাদি এসেছে বিগত দশ হাজার বছরের ভেতর। কিন্তু দশ হাজার বছরে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, মস্তিষ্ক সেই প্রস্তরযুগেই বসে আছে। আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন, আমার বক্তব্যের প্রমাণ কী?
প্রমাণ দিচ্ছি। ওয়েট। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন মেয়েরা পর্নোগ্রাফি খুব বেশি পছন্দ করে না, তারা বিরক্তি ও অস্বস্তিবোধ করে। কিন্তু কেন? পর্নোগ্রাফিক পুরুষরা তো আর সরাসরি তার সাথে সেক্স করছে না। জনি সিন্স তো স্ক্রিন থেকে বের হয়ে তাকে প্রেগন্যান্ট করে দিচ্ছে না। তাহলে তার কীসের ভয়? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, নারীর ব্রেন আসলে বোঝে না যে জনি সিন্স স্ক্রিনের ভেতর। কারণ তার ব্রেন প্রস্তরযুগে বাস করে, সে পর্নোগ্রাফিক পুরুষদের অবচেতন মনে রিয়াল পুরুষ মনে করে, তার অবচেতন মন ধরে নেয় যে জনি সিন্সের পর্নোগ্রাফি দেখলে সে প্রেগন্যান্ট হয়ে যেতে পারে! এ কারণেই নারীরা পর্নোগ্রাফি দেখলে বিরক্ত ও অস্বস্তিবোধ করে( ডিম রিলিজের সময় কেবল এর ব্যতিক্রম দেখা যায়)।
আবার আমরা এটা সবাই জানি যে, পুরুষ কোনো পর্নোগ্রাফিক নারীকে প্রেগন্যান্ট করতে পারবে না। কারণ সেগুলো কোনো রিয়াল নারী নয়, তারা স্ক্রিন নারী, পিক্সেলের তৈরি। এখন প্রশ্ন হলো, সেক্সের উদ্দেশ্য যদি বংশবৃদ্ধি হয়, তাহলে পুরুষ কেন পর্নোগ্রাফি দেখে?
পর্নোগ্রাফিক নারীর সাথে তো রিয়াল সেক্স ও বংশবৃদ্ধি করা যাবে না? তাহলে কেন সানি লিওন, ডেনি ডেনিয়েল অথবা মিয়া খলিফাকে দেখলে পুরুষের পেনিসে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়? এর উত্তর হলো, পুরুষের মস্তিষ্কও অবচেতনে প্রস্তর যুগে বাস করে, যেখানে কোনো স্ক্রিন ছিল না, আর তাই পুরুষের ব্রেন স্ক্রিনের কনসেপ্ট বোঝে না, সে পর্নোগ্রাফিক নারীকে রিয়াল নারীই মনে করে নেয়।
২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে সকল মানুষ টেলিভিশনে বেশি বেশি নাটক ও সিনেমা দেখে, তারা ভীষণ সুখী হয়, তাদের অবচেতন মন ধরে নেয় যে তাদের বিশাল এক ফ্রেন্ড সার্কেল আছে। কিন্তু কেন? কারণ আমাদের পূর্বসূরিরা তাকেই শত্রু মনে করত, যে তাদের আক্রমণ করে, আর তাকে বন্ধু মনে করত, যে তাকে আক্রমণ করে না। টেলিভিশন থেকে কোনো মানুষ বেরিয়ে আমাদের আক্রমণ করে না। আর তাই আমাদের ব্রেন অবচেতনে তাদের নিজের ফ্রেন্ড সার্কেল ভেবে নেয় কারণ আমাদের প্রস্তরযুগের মস্তিষ্ক টেলিভিশন কী জিনিস বোঝে না।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের মস্তিষ্ক এবং তার হাত, পা, নাক অথবা চোখের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই কারণ এগুলো সবই টিকে থাকার উদ্দেশ্যে বিবর্তিত।
মানুষের দেহের এপেন্ডিক্সের কথা আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন। এপেন্ডিক্স বিবর্তিত হয়েছিল তখন যখন আমাদের পূর্বসূরীরা গাছে বাস করত, এটি মূলত প্ল্যান্ট বেইসড ডায়েট হজম করার জন্য বিবর্তিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন গাছে বাস করি না, প্ল্যান্ট বেইসড খাবারও আমরা খাই না আর তাই আমাদের এপেন্ডিক্সের এখন পূর্বের মতো কাজ করার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু এপেন্ডিক্স এখনো রয়ে গেছে। এপেন্ডিসাইটিস নামক রোগে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। ঠিক তেমনি আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর অসংখ্য নেটওয়ার্ক আছে, যেগুলোর এখন আর কোনো কাজ নেই কিন্তু তারপরও সেগুলো আমাদের প্রতি পিকোসেকেন্ড বিরক্ত করে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা বেশি বেশি চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার খেতে চাই। কারণ আফ্রিকার জঙ্গলে আমাদের শিকার ও সংগ্রহ করতে হতো এবং আমাদের অসংখ্য প্রতিযোগী প্রাণীর সাথে তীব্রভাবে যুদ্ধ করতে হতো। এ সময় আমাদের দেহে খুবই উচ্চক্যালোরির দরকার ছিল। চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারে উচ্চমাপের ক্যালোরি থাকে। আর এজন্য আমাদের ব্রেন সার্কিট চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি কগনিটিভ বায়াসডে আক্রান্ত।
কিন্তু আধুনিক যুগে আমরা সারাদিন ল্যাপটপ ও আইফোনের সামনে বসে থাকি, আমাদের সামনে কোনো বাঘ বা সিংহ নেই যে তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে হবে, আমাদের এখন এত হাই ক্যালোরির দরকার নেই। কিন্তু আমাদের প্রস্তর যুগের মস্তিষ্ক এই ব্যাপারটি বোঝে না। সে আনকনসাসলি এখনো মনে করছে যে, সে প্রস্তরযুগেই আছে এবং তার প্রচুর পরিমাণ চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার প্রয়োজন। যেজন্য আজ আমাদের দেহ দিন দিন মোটা হচ্ছে, কোটি কোটি জিম সেন্টার তৈরি হয়েছে ফ্যাট দূর করার জন্য।
পুরুষের মস্তিষ্কের সেক্সচুয়াল জেলাসিও অনেকটা এপেন্ডিক্সের মতো। পুরুষ নারীকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে শেয়ার করতে চায় না কারণ আদিম সমাজে নারী ছিল বহুগামী। আজ আমেরিকার প্রায় ৩০% পুরুষ এমন কোনো সন্তানের বাবা, যার সাথে তার জেনেটিক রিলেশন নেই কারণ তার স্ত্রী তার অজান্তে অন্য কোনো পুরুষের সাথে সেক্স করেছে।
এটা পুরুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অন্যের সন্তান লালন-পালনের মধ্যে তার কোনো জেনেটিক উপকারিতা নেই, এটা অনেকটা জেনেটিক সুইসাইড করার মতো ঘটনা। আফ্রিকার জঙ্গলে এই ঘটনাটি আরও বেশি ছিল, লাখ লাখ পুরুষ নিজের অজান্তে অন্য পুরুষের সন্তান লালন-পালন করেছিল। এজন্য পুরুষের মস্তিষ্কে সেক্সচুয়াল জেলাসি বিবর্তিত হয়, পুরুষ নারীর পাশে অন্য কোনো পুরুষকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আধুনিক সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। এখন একজন নারী আর শত শত পুরুষের সাথে সেক্স করে না, এখনকার নারীদের মধ্যে একগামিতা ও বিশ্বস্ততার আচরণও দেখা যায়।
কিন্তু পুরুষের ব্রেন এটা বুঝতে পারে না, পুরুষের ব্রেন ১০,০০০ বছর পূর্বের প্রস্তর যুগেই পড়ে আছে। আমাদের মস্তিষ্কের কাছে ডিজিটাল যুগের কোনো কনসেপ্ট নেই। আমাদের অবচেতন মন ডিজিটাল যুগ কি জিনিস সেটাই এখনো আলাদা করতে পারে না। আজকের যুগে একজন নারী যতই বিশ্বস্ত হোক, পুরুষ নারীকে সন্দেহ করে ও কষ্ট পায়। এটি পুরুষের মস্তিষ্কের একটি এপেন্ডিক্স। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বলছে যে, এটি একটি খারাপ অভিযোজন বা ম্যাল অ্যাডপটেশন। এটা পুরুষের মস্তিষ্কের একটি ক্যান্সার। পুরুষরা এই খারাপ অভিযোজনের কারণে খুবই দুর্ভোগ পোহায়, তারা ভীষণ কষ্ট পায়। আজকের যুগে অনেক জন্মনিয়ন্ত্রক মেডিসিন আছে। এগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই গর্ভনিরোধ করা যায়।
তার প্রেমিকা অন্য কোনো পুরুষের সাথে সেক্স করলেও, এখন আর সন্তান জন্ম হওয়ার ভয় নেই। এখন তার জেনেটিক সুইসাইড করার ভয় নেই। কিন্তু আনুমানিক ৬ মিলিয়ন বছর আগে যে ভয় পুরুষের মনে ঢুকেছিল, সেটি এখনো তার ব্রেন থেকে বের হচ্ছে না। ডিজিটাল বিশ্বে একজন মেয়ে যদি মিলিয়ন মিলিয়ন পুরুষের সাথেও সেক্স করে, তারপরও তার সন্তান জন্ম হবে না কিন্তু পুরুষের ব্রেন অবচেতন মনে ধরে নেয় যে, সন্তান জন্ম হবে।
সে নারীকে চূড়ান্ত পর্যায়ের গার্ড দেয়, তার চারপাশে দেয়াল তুলে রাখে এবং নারীর ওপর শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করে। সাভানা প্রিন্সিপল অনুসারে, পুরুষের ব্রেন জন্মনিয়ন্ত্রণ, লিখিত আইন, পুলিশ অথবা আদালতের মতো কনসেপ্টগুলো সঠিকভাবে বুঝে না। কারণ প্রস্তর যুগে জন্মনিয়ন্ত্রণ, লিখিত আইন অথবা আদালতের মতো বিষয়গুলো ছিল না। পৃথিবীর ১০ মিলিয়ন কয়েদির মধ্যে ৯ মিলিয়নই পুরুষ কারণ পুরুষের ব্রেন আইন, আদালত ও পুলিশের কনসেপ্ট এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।
Reference:
- Why Beautiful People Have More Daughters: From Dating, Shopping, and Praying to Going to War and Becoming a Billionaire, by Alan Miller (Author), Satoshi Kanazawa (Author)
- Fast-Evolving Brains Helped Humans out of the Stone Age: https://www.scientificamerican.com/article/evolutionary-psychology-brain-changes/
- The Trouble with the Savannah Hypothesis: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-scientific-fundamentalist/201003/the-hypothesis
- Evolutionary Psychology: The “Stone Age in the Head”?: https://www.cep.ucsb.edu/
- Neuroplasticity: Your Brain Can Change: https://news.harvard.edu/gazette/story/2017/08/brain-flexibility-changes-the-way-we-remember-and-learn/
- The Psychology of Pornography: https://www.psychologytoday.com/us/basics/pornography
Read more: এক্স-ইউনিভার্স: ফেমিনিন ফিউশ
প্রস্তরনারী কেন জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ নারীনারীনারীনারী কেন নারী কেন জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না? জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না? কেন জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না? কেন জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না? কেন জনি সিন্সকে ভয় পায় আর পুরুষ কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না? কেন পুলিশে বিশ্বাস করে না?