কাজী মাহবুব হাসান অনূদিত রিচার্ড ডকিন্সের সেলফিশ জিন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বইগুলোর একটি। মাল্টি-মিলিয়ন কপি বেস্ট সেলার বই এটি। কিন্তু এ বইটিকে বেশিরভাগ মানুষই নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভুল বুঝেছে!বাংলাদেশে এই মিস-আন্ডারেস্টেন্ডিং ব্যাপক! বিশেষ করে জেনেটিক্যাল স্বার্থপরতা বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেনি। তারা স্বার্থপরতা শব্দটিকে নিয়েছিল আক্ষরিকার্থে। যৌক্তিক ও গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। তারা এ স্বার্থপরতাকে দেখেছিলেন বায়োলজিক্যাল দেহের স্বার্থপরতা হিসেবে জিনের স্বার্থপরতা হিসেবে নয়।
ক্যানিভাল মাকড়সা যখন সেক্স করে তখন স্ত্রী মাকড়সা এক কামড়ে তার মাথাটি খেয়ে ফেলে। জিন তাকে প্রেমিকার খাদ্যে পরিণত হওয়ার জন্য এভাবেই প্রোগ্রাম করেছে। ক্যানিভালের দেহ ও মন কোনোটাই জিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়! কিন্তু কেন? কারণ সন্তান গর্ভে থাকাকালীন স্ত্রীর পক্ষে যথাযথ নিউট্র্যাশন যোগাড় করা সম্ভব নয়। আর যদি সন্তানের মৃত্যু হয় তবে তার জিন ফিউচারে প্রবেশ করতে পারবে না। এজন্য স্বার্থপর জিন পুরুষ কেনিভালকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছে যেন সে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সেক্সের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করে! সন্তানের লালন-পালনের জন্য মায়ের জীবন পিতার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর তাই সে তার প্রেমিকাকে ভবিষ্যৎ জিনের জন্য একা রেখে হারিয়ে যায়!
![](https://i0.wp.com/www.hyperspacebd.com/wp-content/uploads/2022/11/WhatsApp-Image-2022-11-24-at-10.22.14-AM-1-1.jpeg?resize=1024%2C819&ssl=1)
এই দৃশ্যকল্পে, স্বার্থপর জিন যে পদ্ধতিতে নিজের ভবিষ্যতের জন্য পুরুষ কেনিভালকে হত্যা করেছে ঠিক একই পদ্ধতিতে সামগ্রিক মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের জন্য সে নিউটন ও আইনস্টাইনকেও হত্যা করে। পৃথিবীর বেশিরভাগ শিল্পি, বিজ্ঞানী এবং ক্রিয়েটিভ পারসনরা মানসিক রোগাক্রান্ত হয়। কেউ সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত তো, কেউ অটিজম এসপার্গার ডিজিজে আক্রান্ত। তারা পরিবারের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না, তারা সমাজিক ইমোশনের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না, তারা বর্তমান জীবনের প্রয়োজনীয়তার সাথে সংযুক্ত হতে পারে না। কারণ তাদের মস্তিষ্কে সেন্স অভ প্রেজেন্টের সাথে সম্পৃক্ত ব্রেইন সার্কিট স্বার্থপর জিন দূর্বল করে দেয়( Here and Now Circuit)।
তারা মানুষের সাথে ইমোশনাল বন্ধন তৈরি করতে পারে না। তাদের ব্রেইন সবসময় সেন্স অভ ফিউচারের ভেতর ডুবে থাকে( Future Anticipation Circuit)। তারা ইউনিভার্সের ফিউচার নিয়ে ভাবে, ভাবে মহাবিশ্বের শেষ তিন মিনিট নিয়ে কিন্তু তারা এই মুহূর্তে তাদের সামনে অবস্থানরত নিজের ফ্যামলি ও ফ্রেন্ডের কথা ভাবে না! এ পদ্ধতিতে স্বার্থপর জিন কেনিভাল মাকড়সার মতো জিনিয়াসদের ব্রেইনকে মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের জন্য হত্যা করে! এজন্য আইনস্টাইন বলেছিলেন, আমি হিউম্যানিটিকে ভালোবাসি, হিউম্যানকে নয়! আলফ্রেড নোবেল বলেছিলেন, “আমি একজন মিসেন্থোপ। আমি মানবতার সেবা করার স্বপ্ন দেখি কিন্তু আমি একজন মানুষের সাথে দু-দিনের বেশি টিকতে পারব না! মানুষ যতই কাছে আসে তাদের প্রতি আমি ততই বিরূপ হয়ে উঠি!” এভাবে এডনা সেন্ট ভিনসেন্ট, ফিওদর দস্তয়েভস্কি, চার্লস শুলজ অথবা পল ডিরাক এদের প্রত্যেকেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন!ন্যাশনাল একাডেমি অভ সায়েন্স, রয়েল সোসাইটির সদস্য এবং টপ লেভেলের নোবেল প্রাইজ উইনারদের মধ্যে আমরা এই প্রবণতা দেখতে পাই।( বিস্তারিত আমার বই “ডোপামিন: দ্যা মলিকিউল অভ মোরে পাবেন)
আইনস্টাইন যে শুধু সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে দূর্বল ছিলেন তাই নয়। তিনি কখনোই একজন প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। কারণ যাদের মস্তিষ্কে সবসময় সেন্স অভ ফিউচার কাজ করে তাদের মস্তিষ্ক ডোপামিন ড্রাইভ, আর ডোপামিন তাদেরকে এক প্রেমিকার উপর সন্তুষ্ট হতে দেয় না। ডোপামিন সব সময় তাকে অবাস্তব, অসম্ভব ও অজানা বাস্তবতার দিকে চালিত করে, তারা বাস করে সেখানে যা নেই আর এভাবেই ডোপামিন তাদের মস্তিষ্কে বর্তমান অর্জনের প্রতি অসন্তোষ তৈরি করে, ভয়াবহ দুঃখ, যন্ত্রণা আর একাকীত্ব দিয়ে নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতার উদ্ভব ঘটায়, তাদের ব্রেইন থেকে বেরিয়ে আসে বাস, ট্রাক, বিমান, রকেট ও কম্পিউটার! যে ডোপামিন আইনস্টাইনের ব্রেন থেকে পদার্থবিদ্যার সমীকরণ বের করেছিল , ব্ল্যাকহোল, ওয়ার্মহোল, হোয়াইটহোল ও বিগব্যাং বের করেছিল, একই ডোপামিন আইনস্টাইনকে বের করে দিয়েছিল পারিবারিক সুখ, শান্তি ও সামাজিক বন্ধন থেকে, তিনি সারাজীবন ছিলেন সিঙ্গুলারিটি পয়েন্টের মতোই একা ! একই ডোপামিনের প্রভাবে আইনস্টাইনের এক সন্তান সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত অবস্থায় একটি আশ্রমে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তারা জীবিত থেকেও কেনিভাল মাকড়সার মতোই মৃত ছিলেন! আর সমাজ ও পরিবার তাদের জেনেছিলেন চরিত্রহীন, উদাস, নির্লিপ্ত ও স্বার্থপর হিসেবে! ভেতর ও বাহির কোথাও তারা সুখ খুঁজে পান নি! (সূত্র: ডোপামিন: দ্য মলিকিউল অভ মোর)
সেলফিশ জিন খুবই ভয়াবহ একটি বই! এ বইটি পড়লে আপনি আবেগীয়ভাবে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হবেন কিন্তু এই বইটি একটি আশাবাদী বই কারণ এ বইটি আপনাকে শেখাবে কেন দলবদ্ধ হতে হয়, কেন পরার্থপর হতে হয় এবং কেন আমাদের নৈতিক হতে হয়।
ডায়নোসরের জিন সেলফিশ, তার জিন সেলফিশ বলেই মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পরও সে আধুনিক পাখির দেহে টিকে আছে! আজ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বের পুরগাতারউসের জিন সেলফিশ, তার জিন এতটাই সেলফিশ যে ৬৫ মিলিয়ন বছর পরও তার উত্তরসূরী আমি টিকে আছি, যে এ মুহূর্তে এ লেখাটি লিখছে! তার জিন যদি সেলফিশ না হত তবে এ মুহূর্তে লিহন অস্তিত্বশীল থাকতে পারত না! মানব সভ্যতা উদ্ভবের পূর্বেই বিলুপ্ত হয়ে যেত ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে!
যে স্বার্থপর জিন মানব নামক একটি রোবট তৈরি করে বিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন জীবকে হত্যা করছে আজ। একই স্বার্থপর জিন আর্কিওপটেরিক্স থেকে ১০,০০০ প্রজাতির পাখির বিবর্তন ঘটিয়েছে পৃথিবীতে! আর্কিওপটেরিক্সের জিন যদি স্বার্থপর না হত তবে আমরা আজ ডায়নোসরের আধুনিক রূপ মুরগির মাংসের গ্রিল খেতে পারতাম না!
এ বইটি জটিল গাণিতিক প্রক্রিয়ার শাব্দিক প্রকাশ! প্যারাডক্স আর থ্রিলে পরিপূর্ণ! এ বই আপনাকে আবেগীয়ভাবে অত্যাচার করার জন্য নয়, আপনার মনকে জীবনের প্রতি ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলার জন্যও নয়, এ বইটি আপনাকে শেখাবে কোন পদ্ধতিতে চিন্তা করতে হয়, কোন পদ্ধতিতে চিন্তা করলে জীব বৈচিত্র্য ও জীবদের আচরণ বোঝা সম্ভব! যারা বিবর্তন তত্ত্বকে বুঝতে চান এবং সামগ্রিকভাবে এ বই হল তাদের জন্য চিন্তার সমীকরণ, দ্য থট বাইবেল।
বইটি সংগ্রহ করার জন্য যোগাযোগ করুন “হাইপারস্পেস ফেসবুক পেজে”
![May be an image of book](https://scontent.fdac1-1.fna.fbcdn.net/v/t39.30808-6/316171257_697014125277545_7368667057780578793_n.jpg?stp=dst-jpg_s960x960&_nc_cat=106&ccb=1-7&_nc_sid=8bfeb9&_nc_eui2=AeH6KaNoafdKeqq9-xD6D292eW-8ZIbtN-N5b7xkhu034zBSlrop2ERkx1wuUKz03p8ImjvJHueeOeG1TKEDkf_4&_nc_ohc=lH1VBWsmRnEAX9ISi2k&_nc_zt=23&_nc_ht=scontent.fdac1-1.fna&oh=00_AfCGWjq5solLrNgNbQ0cWLUwfM4e9fAtmWiOoKTcIaxgag&oe=63840044)