Can't find our books? Click here!
কেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্যারাডক্সিক্যাল?

কেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্যারাডক্সিক্যাল?

ঈশ্বর জানেন অজ্ঞতা কী? যদি না জানেন তবে তিনি অজ্ঞ! যদি জানেন তাহলেও তিনি অজ্ঞ!

  • যদি ঈশ্বর মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করে থাকে, তবে এমন কোনো সত্তা অথবা কারণের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে যা ঈশ্বরের অস্তিত্বের জন্য দায়বদ্ধ।
  • এটি একটি প্রশ্ন তৈরি করে, ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছে? যদি কেউ অথবা কোনোকিছু থেকে ঈশ্বর সৃষ্টি হয়, তবে তার আগে যে সত্তা ছিল, সে নিশ্চয়ই আরও শক্তিশালী: এ নতুন ঈশ্বরকে কে তৈরি করেছিল?
  • আমরা যদি সে স্রষ্টার পেছনে অন্য আর একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব চিন্তা করি, আমরা একই প্রশ্নের মুখোমুখি হই: কে অথবা কী সে নতুন স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছিল?
  • প্রশ্নের এই সরলরেখা কারণের একটি ইনফিনিট রিগ্রেস তৈরি করবে। যেখানে প্রতিটি স্রষ্টার জন্য পূর্ববর্তী আর একজন স্রষ্টা লাগবে এবং এভাবে তাদের উদ্ভবের আল্টিমেট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না।
  • এ প্যারাডক্স জাগ্রত হয়েছিল এই ধরনের একটি ধারণা থেকে যে যদি সবকিছুর কারণ অথবা ক্রিয়েটর থাকে, তবে অসীম সংখ্যক কারণের চেইন তৈরি হবে, যেখানে আমরা আল্টিমেট ঈশ্বরের শূন্যতা দেখতে পাব।
  • ইনফিনিট রিগ্রেস কার্য-কারণের ঐতিহ্যবাহী ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং একটি স্বতন্ত্র কারণহীন কারণের সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
  • এই প্যারাডক্স ব্যক্তিগত ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, যে মহাবিশ্বের অন্তিম কারণ। এটি একটি অমিমাংসিত প্রশ্ন জন্ম দেয়, ঈশ্বরের কারণ কী ছিল?
  • কারও কারও যুক্তি হলো, এই প্যারাডক্স সমাধান করা সম্ভব, যদি আমরা ধরে নেই যে, ঈশ্বর নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল হয়েছে এবং তিনি কার্য-কারণের বাহিরে অবস্থান করে। কিন্তু  এই ব্যাখ্যা আর একটি জটিল দার্শনিক প্রশ্ন জাগ্রত করে, যদি ঈশ্বর নিজে নিজেই সৃষ্টি হয় এবং তার জন্য কোনো কারণ ও ব্যাখ্যার প্রয়োজন না হয়, তবে কেন মহাবিশ্ব অথবা অন্য কোনো সত্তা নিজে নিজে অস্তিত্বশীল হতে পারবে না, কেন তাদের অস্তিত্ব কারণহীন হতে পারে না?
  • ঈশ্বরের কোন চরিত্র তাকে নিজে নিজে অস্তিত্বশীল হওয়ার অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু  অন্য কোনো বস্তুকে দেয়নি?
  • ঈশ্বর ও মহাবিশ্বের অন্যান্য সকল বস্তুর মধ্যে এই স্বচ্ছাচারী তারতম্য সৃষ্টি করার পেছনে যুক্তি কী?

এই প্যারাডক্স প্লেটোর লেখা সক্রেটিস ও উইথিফ্রো-এর মধ্যকার একটি আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এটি ঈশ্বর ও নৈতিকতার সম্পর্ক নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে:

  • একটি কর্ম কী এজন্যই নৈতিক কারণ ঈশ্বর সেটি আদেশ করেছিলেন?
  • এ দৃষ্টিকোণ আমাদের বলে, নৈতিকতা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের আদেশ দ্বারা নির্ধারিত। কোনো একটি কর্ম এজন্যই নৈতিকভাবে সঠিক কারণ ঈশ্বর এটি আদেশ করেছিলেন। এক্ষেত্রে, আমরা দেখতে পাই, নৈতিকতা ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর প্রতিষ্ঠিত, কোনটি নৈতিকভাবে সঠিক বা সঠিক নয় তা পুরোপুরি স্বর্গীয় ডিক্রি দ্বারা নির্ধারিত হয়।
  • কোনো একটি কর্ম নৈতিকভাবে সঠিক বলেই কী ঈশ্বর সেটা আদেশ করেছিলেন?
  • এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, কোনো একটি কর্মের মধ্যে সহজাতভাবেই নৈতিক গুণ উপস্থিত থাকে, যেটা ঈশ্বরের আদেশ নিরপেক্ষ। এ দৃষ্টিকোণ অনুসারে, কোনো একটি কর্মের মধ্যে ইতোমধ্যে যে নৈতিক গুণ উপস্থিত ছিল, ঈশ্বর সেটাকে চিহ্নিত  ও আদেশ করেন, নৈতিকতার কিছু বস্তুগত স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে নৈতিকতা ঈশ্বরের ইচ্ছা নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা কেবলমাত্র সহজাত নৈতিক গুণের সাথে একটি সমন্বয়।
  • আমরা যখন এই দুটি সম্ভাবনাকে বিবেচনা করতে যাই, তখন প্যারাডক্স তৈরি হয়:
  • যদি আমাদের কর্ম ঈশ্বর আদেশ দিয়েছেন বলেই সঠিক হয় তবে, এটি একটি প্রশ্ন তৈরি করে, নৈতিকতা কী যাদৃচ্ছিক? যদি ঈশ্বর প্রচলিতভাবে অনৈতিক বলে বিবেচিত কোনোকিছুকে আদেশ করেন যেমন শিশু হত্যা, সেটি কী ঈশ্বরের আদেশ বলে নৈতিক হয়ে যাবে?
  • যদি ঈশ্বর সে সকল কর্মকেই আদেশ করেন যা সহজাতভাবেই নৈতিক, তবে এটি একটি প্রশ্ন জাগ্রত করে, ঈশ্বর কী কেবল পূর্ব থেকেই বিদ্যমান কিছু নৈতিক নিয়মের মেসেঞ্জার অথবা আবিষ্কারক? নৈতিকতার নিয়মগুলো কী ঈশ্বর নৈতিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পূর্ব থেকেই অস্তিত্বশীল?

বাইবেলের ট্রিনিটি প্যারাডক্স ছিল একটি কেন্দ্রীয় তাত্ত্বিক ধারণা, যেটি তিনজন স্বতন্ত্র সত্তাকে এক ঈশ্বরের সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটি একটি প্যারাডক্স জন্ম দেয়:

  • ট্রিনিটির মতবাদ ছিল ঈশ্বর একটি একক সত্তা, যদিও সে তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির মধ্যে অস্তিত্বশীল: পিতা, পূত্র (জেসাস) এবং পবিত্র আত্মা। প্রতিটি ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈশ্বর, কিন্তু  তারা একজন অন্যজনের মতো নয়। যদিও তারা একই নির্যাস অথবা উপাদান ভাগ করেছে।
  • এখান থেকে তার পরিচয়ের প্রকৃতি ও ঐক্য সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। কীভাবে তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি একজন স্বতন্ত্র ঈশ্বরের একত্বের ওপর বিশ্বাস ধারণ করতে পারে?
  • ট্রিনিটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য অজস্র অ্যানালজি ব্যবহার করা হয়েছিল যেমন পানি একইসাথে তিন  অবস্থায় (কঠিন, তরল ও বায়বীয়) থাকতে পারে, কিন্তু  তারা একই। অথবা সময়ের তিনটি ডায়মেনশন আছে (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ)। কিন্তু  এ সকল সাদৃশ্য আসলেই বেমানান এবং এগুলো ট্রিনিটির সঠিক রিপ্রেজেন্টেশন নয়। আপনি এরকম আরও অসংখ্য রূপক ব্যবহার করতে পারবেন যেমন পাই (π= 3.14159) এর মান ও গোল্ডেন রেশিও (φ= 1.61803) মহাবিশ্বের সর্বত্র সমান ও অপরিবর্তনীয়। একটি বৃত্ত যত বড় অথবা ছোট হোক না কেন আপনি তার পরিধিকে ব্যাসার্ধ দিয়ে ভাগ করলে পাই এর মান π= 3.14159 পাবেন। আপনি ফিবোনাচি সিরিজে অসীমকাল পথ চললেও, পরবর্তী সংখ্যাকে পূর্ববর্তী সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে একই গোল্ডেন রেশিও  পাবেন আর এই মান হলো প্রায় φ= 1.61803, যা ট্রিনিটির একত্বের প্রমাণ! প্রতিবার আপনি যখন সিকোয়েন্সের নতুন নতুন সংখ্যা ভাগ করবেন, আপনি কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনিশনের ডিজিট পাবেন যেমন: ২১ কে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে, আপনি পাবেন ১.৬১৫৩৮৪৬১৫৩৮।  আবার আপনি যদি ৩৪ কে ২১ দিয়ে ভাগ করেন, তবে আপনি পাবেন ১.৬১৯০৪৭৬১৯০৪। তার মানে দেখা যাচ্ছে, ট্রিনিটির ইকুয়েশন মিলে যাচ্ছে, তিনজন স্বতন্ত্র সত্তার মধ্যে আলাদা আলাদা ভাবে একই ঈশ্বর পরিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে পারে। এছাড়া আপনি এখানে কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের অ্যানালজিও নিয়ে আসতে পারেন, যেমন কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে, একটি কণিকা একইসাথে ও একইসময় মাল্টিপল স্থান ও সময়ে থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ এখানে হায়ার ডায়মেনশনও নিয়ে আসতে পারেন। আপনি বাইবেলের, ট্রিনিটি ব্যাখ্যা করার জন্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে এমন অনেক কনসেপ্টই নিয়ে আসতে পারবেন যা আসলে মূল সত্যের সাথে সম্পর্কহীন। আর আপনার এসব ব্যাখ্যা খ্রিষ্ঠান ধর্ম তাত্ত্বিকরা কখনোই গ্রহণ করবে না। তাই তাদের কাছে ট্রিনিটি প্যারাডক্সের কোনো সমাধান নেই। ট্রিনিটি চরমভাবে বিতর্কিত একটি কনসেপ্ট। এছাড়া জিশুর অস্তিত্ব নিয়েও অনেক স্কলার সংশয় প্রকাশ করেন।
  • অনেকে যুক্তি দেয়, ট্রিনিটি একটি রহস্য যা মানুষের জ্ঞানকে অতিক্রম করে এবং আল্টিমেটলি এটাকে বিশ্বাস দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। এটা এমনকিছু যা মানুষের যুক্তি পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারে না।
  • কিন্তু  সমালোচকরা বলেন, ট্রিনিটি সহজাতভাবেই কন্ট্রাডিক্টরি এবং তিনজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি একইসাথে ও একইসময় কোয়ান্টাম কণার মতো তিন জায়গায় থাকতে পারে না, আর তারা কোনো গাণিতিক কোডও নয়। এছাড়া ট্রিনিটি যদি গভীর কোনো সত্যের রূপক প্রকাশও হয়, তার সাপেক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এ ধরনের দাবি সম্পূর্ণ হাস্যকর, যার সাপেক্ষে কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই।

সর্বজ্ঞতা ও স্বাধীন ইচ্ছার প্যারাডক্স একটি দার্শনিক ও ধর্মীয় উভয়সংকট যা জাগ্রত হয় ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতা ও স্বাধীন ইচ্ছার ধারণা থেকে। এ প্যারাডক্সের সাথে জড়িত মূল পয়েন্টগুলো এখানে আলোচনা করা হলো:

  • সর্বজ্ঞতা: ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতার ধারণায় বিশ্বাস আমাদের বলে যে, ঈশ্বর সকল কিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও যথার্থ জ্ঞান রাখে, যার মধ্যে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত অন্তর্ভূক্ত। তার এ জ্ঞানের মধ্যে মানুষের সকল নির্বাচন ও পছন্দও জড়িত।
  • স্বাধীন ইচ্ছা: স্বাধীন ইচ্ছা বলতে আমরা এমন কোনো পছন্দ অথবা নির্বাচন বুঝি যা এক্সটারনাল কোনো ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত অথবা পূর্বনির্ধারিত নয়। এটি আমাদের নির্দেশনা দেয় যে, একজন ব্যক্তির স্বতন্ত্রভাবে কোনোকিছু করার সক্ষমতা আছে এবং সে এক্সটারনাল ফোর্স দ্বারা পূর্বনির্দিষ্ট কোনো প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।  
  • প্যারাডক্স: প্যারাডক্স জাগ্রত হয়, যখন আমরা ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতাকে স্বাধীন ইচ্ছার সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করি। যদি ঈশ্বর আমাদের কর্ম ও পছন্দ সহকারে ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে সম্পর্কে জানেন, এর অর্থ কী এটাই যে আমাদের নির্বাচন পূর্বনির্ধারিত? আমাদের নির্বাচন যদি পূর্বনির্ধারিত হয় তবে, আমাদের পক্ষে কী বিশুদ্ধভাবে স্বাধীন ইচ্ছা অধিকার করা সম্ভব?
  • বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ: দার্শনিক ও ধর্ম তাত্ত্বিকরা এই প্যারাডক্স মিমাংসা করার জন্য বিভিন্ন সমাধান প্রস্তাব করেছেন, কিন্তু  কোনো সমাধানই সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ কম্প্যাটিবিলিজম নামক একটি দাবি উপস্থাপন করেছিলেন, তারা নির্দেশ করেন, ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতা ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা একসাথে অবস্থান করতে পারে।
  • নির্ধারণবাদ বনাম অনির্ধারণবাদ:এ প্যারাডক্স নির্ধারণবাদ ও অনির্ধারণবাদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। নির্ধারণবাদ সকল ঘটনা ধারণ করে, মানুষের প্রতিটি কর্ম, যা পূর্ববর্তী কারণ দ্বারা পূর্বনির্দিষ্ট। যেখানে অনির্ধারণবাদ বলছে, কিছু ঘটনা, যার মধ্যে মানুষের নির্বাচনও জড়িত, এগুলো বিশুদ্ধভাবে যাদৃচ্ছিক (Random) অথবা পূর্বনির্দিষ্ট নয়।  
  • ওপেন থেইজম: ওপেন থেইজম এই প্যারাডক্স মোকাবিলা করতে গিয়ে বলে, ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে ভবিষ্যত সম্পর্কে তার জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করেন, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে সংরক্ষণ করার জন্য। এ দৃষ্টিকোণ অনুসারে, ঈশ্বর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানেন না।
  • প্যারাডক্স: কিন্তু  এটি আর একটি প্যারাডক্স জন্ম দেয়। ঈশ্বর যদি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না রাখেন, তবে মহাবিশ্বের এমন অনেক অংশ আছে, যা ঈশ্বরের জ্ঞানের বাহিরে। যদি তাই হয়, তিনি মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। এছাড়া, মানুষকে দেয়া স্বর্গ অথবা নরকের প্রতিশ্রুতিও তিনি ভুলে যেতে পারেন। আর ঈশ্বর যদি ফিউচার ইউনিভার্স সম্পর্কে আনকনসাস থাকে, শয়তান জাগ্রত হবে, সে বিশ্বে অনেক দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। যা একজন পরম করুণাময় ঈশ্বর কখনোই চলতে দিতে পারেন না।

স্বর্গীয় সরলতার এ ধারণা ঈশ্বরের প্রকৃতির সাথে তার গুণের কনফ্লিকশন তৈরি করে। আমরা এখানে এই প্যারাডক্সের মূল পয়েন্টগুলো উপস্থাপন করছি:

  • স্বর্গীয় সরলতা: স্বর্গীয় সরলতার ধারণা অনুসারে, ঈশ্বর কোনো খণ্ড অথবা জটিলতা দিয়ে তৈরি নয়। এটি আমাদের বলে যে, ঈশ্বর মৌলিকভাবে সরল, কোনোপ্রকার বিভাজন, সংমিশ্রণ অথবা জটিলতা নেই তার। এর অর্থ হলো, ঈশ্বরের নির্যাস তার গুণাবলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। ঈশ্বরের গুণাবলী নিশ্চয়ই আলাদা কোনো অংশ অথবা উপাদান নয়, এগুলো ঈশ্বর থেকে তারতম্যহীন ও অখণ্ড।
  • স্বর্গীয় গুণাবলী: একইসময়, ধর্মীয় ঐতিহ্য আমাদের কাছে আলোচনা করে ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ আছে যেমন জ্ঞান, ভালোবাসা, ন্যায়-বিচার, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা। এ সকল গুণাবলী ঈশ্বরের প্রকৃতির অপরিহার্য দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় এগুলোর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব ও মানবতার সাথে মিথস্ক্রিয়া করেন।
  • প্যারাডক্স: এই প্যারাডক্স জাগ্রত হয়, যখন আমরা স্বর্গীয় সরলতা এবং স্বর্গীয় গুণাবলির বহুমূখিতার মধ্যকার টেনশন বিবেচনা করি। যদি ঈশ্বর সত্যিকারেই সরল হয়, তবে কীভাবে তিনি একাধিক গুণাবলী ধারণ করেন, যেগুলোর একটি অন্যটি থেকে আলাদা? কীভাবে ঈশ্বর একই সাথে প্রেমময়, ন্যায়পরায়ণ এবং জ্ঞানী হতে পারেন এই বৈশিষ্ট্যগুলি পৃথক এবং জটিল না হলে?
  • ঈশ্বরের সংজ্ঞা অনুসারে, ঈশ্বর এমন একটি সত্তা যার থেকে মহান আর কোনোকিছুই আমাদের চিন্তা চিন্তা করতে পারে না।
  • আমরা জানি যে, মহানুভবতা নির্ভর করে, তার গুণের মহিমার উপর।
  • অতএব ঈশ্বর এমন একটি সত্তা, যার থেকে মহান আর কোনোকিছুই হতে পারে না।
  • আমরা ঈশ্বরকে তখনই গুণসম্পন্ন বলতে পারি, যদি তিনি দুঃখ ও বিপদকে অতিক্রম করতে পারেন।
  • এর মানে হলো একজন ব্যক্তির পক্ষে তখনই পূন্যবান হওয়া সম্ভব, যদি তিনি দুঃখ ও যন্ত্রণা অনুভব করেন।
  • একজন ঈশ্বর যিনি দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা অথবা ধ্বংস অনুভব করেন, তিনি কখনোই আমাদের চিন্তায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেন না!
  • আপনি মহান বলতে এমন এক মহান সত্তাকে চিন্তা করেছেন, যে দুঃখ ও ধ্বংস অনুভব করেন না! অতএব ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই।
  • যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন, তবে তিনি মহাবিশ্বের কোনো পরমাণু থেকে দূরে নন।
  • এজন্য কোনো বস্তুর পক্ষেই উপাসনার উপকরণ হওয়া সম্ভব নয়।
  • অতএব, এমন কোন সত্তা অস্তিত্বশীল থাকতে পারেন না যিনি ঈশ্বর।
  • ঈশ্বর যদি থেকে থাকে তবে তার গুণাবলী শয়তানের গুণাবলীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে (কল্পনা করুন, শয়তানের গুণাবলী সামগ্রিকভাবে ঈশ্বরের গুণাবলী থেকে ভিন্ন।)
  • ঈশ্বরের গুণাবলীকে আমরা সাধারণত পরিপূর্ণ ভালো হিসেবে জানি, যা সহজাতভাবে শয়তানের গুণাবলীর সাথে সাংঘর্ষিকতাপূর্ণ।
  • এজন্য, ঈশ্বর কোনোভাবেই অস্তিত্বশীল নয় কারণ শয়তান ও ঈশ্বর সহাবস্থান করতে পারে না।
  • ঈশ্বর যদি থেকে থাকে, তবে তিনি পরিপূর্ণ নন।
  • ঈশ্বর যদি অস্তিত্বশীল হয় তবে, অবশ্যই তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা।
  • ঈশ্বর যদি পরিপূর্ণ হয়, তবে তিনি যে মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন সেটিকেও পরিপূর্ণ হতে হয়।
  • কিন্তু  মহাবিশ্ব পরিপূর্ণ নয়
  • এজন্য একজন পরিপূর্ণ ঈশ্বরের পক্ষে মহাবিশ্বের নির্মাতা হওয়া সম্ভব নয়।
  • অতএব ঈশ্বরের অস্তিত্ব অসম্ভব।
  • ঈশ্বর যদি থেকে থাকেন, তবে তিনি স্থান ও কালের ঊর্ধ্বে (Transcended)
  • ঈশ্বর যদি থেকে থাকেন, তবে তিনি অবশ্যই সর্বব্যাপী (Omnipresent)
  • যিনি সর্বব্যাপী, তিনি অবশ্যই স্পেসের সর্বত্র উপস্থিত।
  • সর্বব্যাপী ঈশ্বরের পক্ষে স্পেস-টাইমের উর্ধ্বে যাওয়া সম্ভব না।
  • অতএব ঈশ্বরের পক্ষে অস্তিত্বশীল হওয়া অসম্ভব
  • যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন, তবে তিনি নন-ফিজিক্যাল।
  • যদি ঈশ্বর সত্যিই থাকেন, তবে তিনি একজন ব্যক্তি।
  • আর একজন ব্যক্তির জন্য স্থান অপরিহার্য
  • অতএব ঈশ্বরের পক্ষে অস্তিত্বশীল হওয়া অসম্ভব।
  • ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়, তবে তাকে এমন একটি পাথর তৈরি করার নির্দেশনা দিন, যার ভার সে নিজেই বহন করতে পারবে না।
  • যদি ঈশ্বর পাথরটি তৈরি করতে পারেন, তবে তিনি তার ভার অবশ্যই সহ্য করতে পারবেন না।
  • ঈশ্বর যদি পাথরটি তৈরি করতে না পারেন, তবে এটি তার সর্বশক্তিমত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
  • আর এভাবে, সর্বশক্তিমান কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
  • ঈশ্বর মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর ও প্রিজার্ভার
  • ঈশ্বর মহাবিশ্বের স্ট্রাকচারের স্থপতি ও তিনি পদার্থবিদ্যার সূত্রের রাইটার।
  • ঈশ্বর যখনই চান, তখনই তিনি ঘটনার প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারেন, যা তার নিজস্ব আইনকে লঙ্গন করে, বিশেষ করে যখন তিনি মানুষের ডাকে সাড়া দেন।
  • ঈশ্বর হিউম্যানিটির ক্রিয়েটর এবং প্রিজার্ভার (প্রতিপালক), যেখানে মানব সভ্যতা বিশ্বের অন্য সকল প্রাণী থেকে বিশেষ।
  • ঈশ্বর মানুষের ভেতর অনন্ত আত্মা স্থাপন করেছেন যা দেহ থেকে মুক্ত, যা ব্যক্তির চরিত্র ও নিজস্বতা বহন করে।
  • ঈশ্বর নৈতিকতার উৎস এবং অন্যান্য মানবীয় গুণের বিশেষ করে স্বাধীনতা, বিচার ও গণতন্ত্র।
  • ঈশ্বর তার লিখিত উক্তিগুলো ধর্মগ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেছেন এবং তিনি সরাসরি নির্বাচিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেন।
  • ঈশ্বর মানব সভ্যতাকে এ মহাবিশ্বে রেখে পালিয়ে যায়নি, যে কোনো মানুষ যিনি মুক্তমনা অবশ্যই তিনি ঈশ্বরের দেখা পাবেন।

এ সকল যুক্তিগুলো সাধারণত মুসলিম ও খ্রিস্টানরা প্রদর্শন করেন। তার বিভিন্ন প্রাচীন গুণাবলির মধ্যে আমরা সর্বব্যাপীতা, সর্বজ্ঞতা এবং সর্বজনীনতার রূপগুলোকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছি। আমরা আরও প্রমাণ করেছি সরলতা ও জটিলতা ঈশ্বরের সাথে কন্ট্রাডিক্টরি। ঈশ্বরের ৩০ টি গুণ সম্পৃক্ত জুডো-খ্রিষ্ঠান ও মুসলিমদের সাথে। এ ধরনের ঈশ্বর ইতোমধ্যেই ব্যাপকভাবে যৌক্তিক অসঙ্গতি প্রদর্শন করেছে।

  • ইশ্বরের অস্তিত্বের বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলোকে এই যুক্তি প্রক্রিয়ায় বলা হয়ে থাকে “The lack of Evidence argument” ।
  • এমন একজন ঈশ্বরকে হাইপোথিসাইজ করুন, যিনি মহাবিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ রুলস পালন করেন।
  • কল্পনা করুন, ঈশ্বরের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু গুণাবলি যা তার অস্তিত্বের সাপেক্ষে বস্তুগত প্রমাণ উপস্থাপন করে।
  • মুক্তমনে আপনি সে সকল প্রমাণ অনুসন্ধান করুন।
  • যদি সে ধরনের কোন প্রমাণ থেকে থাকে, তবে সিদ্ধান্তে উপনীত হোন যে ঈশ্বর আছে।
  • যদি ঐ ধরনের অবজেক্টিভ প্রমাণ না পাওয়া যায় কোনপ্রকার “Reasonable Doubt” ছাড়া সিদ্ধান্তে উপনীত হোন যে, এ ধরনের গুণাবলি সম্পন্ন কোনো ঈশ্বর নেই।
  • ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, কারণ তিনি মহাবিশ্বের শুরু থেকে শেষ পিকোসেকেন্ড পর্যন্ত জানেন। বিলিয়ন বছর ভবিষ্যৎ তার চোখে এই মুহূর্তেই বর্তমান।
  • একজন ঈশ্বর যার মনস্তত্বে মহাবিশ্বের প্রতিটি পিকোসেকেন্ড এই মুহূর্তেই অস্তিত্বশীল, তিনি জানেন যে ২০২০- ২০২১ সালে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন (কারণ ঈশ্বরের চোখে ভবিষ্যত অতীতের মতোই স্পষ্ট)। আমরা অতীতকে স্মরণ করি কারণ আমরা অতীতকে অতিবাহিত করেছি, কিন্তু  ঈশ্বর ভবিষ্যতকেও জানেন সময়ের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে কোনোপ্রকার ভ্রমণ ছাড়াই।
  • ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ হন, তবে তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টির ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর পূর্ব থেকেই জানতেন যে, আমরা দুঃখ ও দুর্দশায় আক্রান্ত হব। ভাইরাস ও পারমাণবিক বোমা আমাদের ধ্বংস করে দেবে।
  • সবকিছু জেনেও তিনি ২০২১ সালে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করেনি।
  • যার অর্থ হলো একজন সর্বজ্ঞ ঈশ্বর কখনোই তার “Future mind” পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন না।
  • অতএব একজন সর্বজ্ঞ ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন অথবা চূড়ান্ত নিষ্ঠুর।
  • ট্রান্সসেন্ডেন্স: ট্র্যান্সসেন্ডেন্স ধারণা অনুসারে, ঈশ্বর ভৌত মহাবিশ্বের বাহিরে অবস্থান করে। এটি আমাদের বলে ঈশ্বর অন্য কোথাও অবস্থান করে। তার অস্তিত্ব আমাদের ভৌত মহাবিশ্বের উপরে ও ঊর্ধ্বে। ঈশ্বরকে মানুষের বোধের ঊর্ধ্বে মনে করা হয়, যিনি স্পেস, টাইম ও ম্যাটারকে অতিক্রম করে আছেন।
  • ইমানেন্স: এ ধারণা অনুসারে, ঈশ্বর মহাবিশ্বের সকল কিছুর মধ্যে একইসাথে ও একইসময় অবস্থান করছেন। এটি ঈশ্বরের ক্লোজনেসের ওপর গুরুত্ব দেয়। সৃষ্টিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। ঈশ্বর সক্রিয়ভাবে শৃঙ্খলা তৈরির সাথে জড়িত এবং এটি মানুষের অভিজ্ঞতা দ্বারা উপলব্ধ।
  • প্যারাডক্সিক্যাল ন্যাচার: এই প্যারাডক্স জাগ্রত হয় কারণ ঈশ্বর একইসাথে নিজেকে ট্রান্সসেন্ডেন্স ও ইমানেন্স বলছে? কীভাবে ভৌত মহাবিশ্বের ঊর্ধ্বে কোনো ঈশ্বর একইসাথে ভৌত মহাবিশ্বে অন্তঃরঙ্গভাবে উপস্থিত থাকতে পারে? কীভাবে একটি অসীম ও শাশ্বত ঈশ্বর সসীম ও অস্থায়ী একটি মহাবিশ্ব তৈরি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে?
  • হায়ার ডায়মেনশন: মনে করুন, আপনি একমাত্রিক একটি রেখায় বাস করেন, আপনি কেবল সামনে ও পেছনে চলাচল করতে পারবেন। আপনার জ্ঞান হবে একমাত্রিক। আপনি যদি একটি দ্বিমাত্রিক কাগজের পৃষ্ঠে বাস করেন, আপনি ডানে, বামে, সামনে ও পেছনে  চলাচল করতে পারবেন, আপনার জ্ঞান হবে দ্বিমাত্রিক। এভাবে ডায়মেনশনের পরিমাণ যত বৃদ্ধি পায়, আপনার ফ্রিডমও তত বৃদ্ধি পায়। মনে করুন, আপনার কাছে একটি দ্বিমাত্রিক কাগজ আছে, যেখানে চ্যাপ্টা আইনস্টাইন বাস করে। চ্যাপ্টা আইনস্টাইনের জগতে ডান, বাম, সামনে ও পেছনে আছে, কিন্তু  সে উচ্চতা বা থার্ড ডায়মেনশন সম্পর্কে আনকনসাস। আপনি যদি চ্যাপ্টা আইনস্টাইনকে ব্লেড দিয়ে কেটে কাগজ থেকে হাত ধরে “উপরে” তোলেন, আপনি দেখবেন তার পা একই সময় “নিচের” পৃষ্ঠের সাথে সম্পৃক্ত। আপনি দেখবেন, চ্যাপ্টা আইনস্টাইন একইসাথে ও একইসময় একাধিক লোকেশনে অবস্থান করছে। আপনি চ্যাপ্টা আইনস্টাইনের বদলে কল্পনা করুন, এক্স-রে অথবা ইউবি-রশ্মির কথা। মনে করুন, এ দ্বিমাত্রিক কাগজের মধ্যে এক্স-রে কে আপনি চ্যাপ্টাভাবে আটকে রেখেছেন। রশ্মিগুলো দ্বিমাত্রিক জগতের সকল দিকে সমানভাবে ভ্রমণ করে, কিন্তু সে জগতে “উপর” বলতে কিছু নেই। আকস্মিক, আপনি এ আলোকে “থার্ড” ডায়মেনশনে মুক্ত করে দিলেন, আপনি দেখবেন, এ আলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে, এটি ডান, বাম, সামনে, পেছনে, উপরে ও নিচে একইসময় ও একইসাথে অবস্থান করবে। এখন মনে করুন, আমাদের দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা ও সময়ের কনসেপ্টের বাহিরে অন্য কোনো ডায়মেনশন আছে। এ ডায়মেনশনগুলোকে বলে, হায়ার ডায়মেনশন। আলোকে থার্ড ডায়মেনশনে মুক্ত করে দেয়ার পর, আলো যেমন সর্বত্র ছড়িয়ে যায়, এ উচ্চতর ডায়মেনশন আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পরও আমাদের চারমাত্রিক জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। কিন্তু  আমরা এগুলো দেখতে পাচ্ছি না কারণ এগুলো আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের এক একটি পরমাণু থেকেও বিলিয়ন গুণ ক্ষুদ্র। ঈশ্বর যদি হায়ার ডায়মেনশনাল কোনো সত্তা হয়, তবেই তার পক্ষে আমাদের মহাবিশ্বে না থেকেও, আমাদের মহাবিশ্বের সাথে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব। এ ধরনের উচ্চতর কোনো ইউবি-রশ্নি আমাদের দেহের পার্টিকেল ও ফোর্সের মিথস্ক্রিয়া দেখতে সক্ষম, অপারেশন ছাড়াই আমাদের দেহের কোনো অঙ্গচ্ছেদ করতে সক্ষম এবং ডিএনএর স্ট্র্যাকচার পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।
  • সীমাবদ্ধতা: ধার্মিকরা ঈশ্বরকে উচ্চতর ডায়মেনশনের কোনো সত্তা মনে করে না, তারা মনে করে না যে, ঈশ্বর দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা অথবা সময়ের সাথে জড়িত কোনো রিয়ালিটি। এছাড়া প্রতিটি ডায়মেনশনে স্থান ভিন্ন হলেও, সময়ের কনসেপ্ট একই, কিন্তু  ধর্মমত অনুসারে, ঈশ্বর সময়ের বাহিরে। সময়ের বাহিরের কোনো সত্তা কীভাবে উচ্চতর মাত্রার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ের ফ্রেমওয়ার্ক থেকে নিন্মতর মাত্রাকে পর্যবেক্ষণ করে সেটা বোঝা খুবই দুস্কর।  ধার্মিকরা মনে করে, ঈশ্বর মানব জ্ঞান ও বোধের ঊর্ধ্বে এবং মানব জ্ঞান তাকে যে পদ্ধতিতেই বোঝার চেষ্টা করুক না কেন, তাকে বোঝা সম্ভব না। আর হায়ার ডায়মেনশন একটি পদ্ধতি। তাই আমরা ঈশ্বরকে আসলে বুঝতে পারি না। এছাড়া, হায়ার ডায়মেনশন স্ট্রিং থিওরির একটি গাণিতিক কনসেপ্ট, স্ট্রিং থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের মৌলিক প্রপার্টি স্ট্রিং, কোনো ঈশ্বর নয়। এছাড়া ঈশ্বর যদি বিশেষ কোনো ডায়মেনশন থেকে মহাবিশ্বে রূলস প্লে করে, তবে তার থেকে উচ্চতর ডায়মেনশনে প্রবেশের ক্ষেত্রে তার সীমাবদ্ধতা থাকবে। যা এর চেয়েও উচ্চতর মাত্রা সম্পর্কে তার জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করবে। এছাড়া উচ্চতর মাত্রায় কীভাবে কোনো কনসাস সত্তা অস্তিত্বশীল হতে পারে, সেটাও আসলে পরিস্কার নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ হয়, তার সর্বজ্ঞতা ও সর্বশক্তিমত্তার জন্য কেন হায়ার ডায়মেনশনের ওপর নির্ভরশীলতা প্রয়োজন, সে কী যাদৃচ্ছিক ও স্বাধীন সত্তা নয়?

আগের পর্বগুলো:

১) কেন ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই?

২) কেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে প্রথম কারণের দরকার নেই?

Read More books: