এক্সট্রা ডায়মেনশন কী? জীবন ও চেতনার বিবর্তনের পেছনে এক্সট্রা ডায়মেনশনের কোনো ভূমিকা আছে?
এক্সট্রা ডায়মেনশন ফিজিক্সের একটি থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট যা আমাদের প্রস্তাব করছে যে দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা ও সময়ের বাহিরেও আরও অনেক ডায়মেনশন আছে। কিছুকিছু মডেল প্রস্তাব করছে, এক্সট্রা ডায়মেনশন খুবই ক্ষুদ্র, যেখানে অন্যান্যরা প্রস্তাব করছে, এক্সট্রা-ডায়মেনশন অনেক বিশাল। এক্সট্রা ডায়মেনশন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণে ভূমিকা পালন করে কিনা অথবা জীবন ও কনসাসনেস তৈরিতে এর কোনো ভূমিকা আছে কিনা এটি এখনো বিজ্ঞানে একটি অনগোয়িং ডিভেট। এমনও হতে পারে যে, এক্সট্রা-ডায়মেনশন আমাদের প্রযুক্তি ও সংবেদনের সীমাবদ্ধতাজনিত কারণে আমাদের কাছে আন-অবজার্ভেবল।
এটা কী সম্ভব যে এক্সট্রা ডায়মেনশন অসংখ্য মহাবিশ্ব দিয়ে পরিপূর্ণ?
এটা সম্ভব যে, এক্সট্রা-ডায়মেনশন অন্যান্য মহাবিশ্ব অথবা মাল্টিভার্স কনটেইন করে। কিছু থিওরি যেমন ব্রেনওয়ার্ল্ড প্রস্তাব করেছে যে, আমাদের মহাবিশ্ব “ব্রেনে” অস্তিত্বশীল। অনেকে ব্রেন বলতে মস্তিষ্ক ভাবতে পারেন কিন্তু আসলে তা নয়। এখানে ব্রেন বলতে বুঝানো হচ্ছে হায়ার ডায়মেনশনাল একটি পৃষ্ঠ। এ তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্ব অবস্থান করছে একটি ব্রেনের ওপর যেখানে রয়েছে আরও বিশাল হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস। তবে আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে বর্তমানে আমাদের কাছে এর সাপেক্ষে কোনো মূর্তিমান প্রমাণ নেই।
এমন কি হতে পারে এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা?
হ্যাঁ এটা সম্ভব যে এক্সট্রা-ডায়মেনশন আমাদের পর্যবেক্ষণ ও আমাদের সাম্প্রতিক প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা। স্ট্রিং থিওরি অনুসারে, এক্সট্রা-ডায়মেনশন কুচকে পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্র হয়ে গিয়েছে যেটাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন। যাইহোক, এটাও সম্ভব হতে পারে যে এক্সট্রা ডায়মেনশন খুব বেশি ক্ষুদ্র নয়। আমরা এটাকে ডিটেক্ট করতে পারছি না কারণ এটা আমাদের সাম্প্রতিক ইনস্ট্রুমেন্ট রেঞ্জের বাহিরে কারণ এগুলো আমাদের পর্যবেক্ষিক মহাবিশ্বের ম্যাটার ও এনার্জির সাথে খুবই দূর্বল ভাবে ইন্টারেক্ট করে। এটা নোট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা আমাদের সাম্প্রতিক থিওরি ও ধারণা যেগুলো বিজ্ঞানী ও গবেষকরা স্টাডি করছেন ।
এক্সট্রা ডায়মেনশনের পক্ষে বৈজ্ঞানিক কোনো যুক্তি আছে?
- ১) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের মহাবিশ্বে গ্র্যাভিটির উইকনেস আলোচনা করে। কেন গ্র্যাভিটি প্রকৃতির অন্যান্য ফান্ডামেন্টাল ফোর্স থেকে দূর্বল।
- ২) এক্সট্রা ডায়মেনশন প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল ফোর্সগুলো একীভূত করতে সাহায্য করে যেমন গ্র্যাভেটি ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম।
- ৩) এক্সট্রা ডায়মেনশন ডার্ক-ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির প্রকৃতি এক্সপ্লেইন করতে পারে। যে বস্তুগুলো মহাবিশ্বের সামগ্রিক ভরের ৯৫% দখল করে রেখেছে।
- ৪) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন পার্টিকেলদের ভরের মধ্যে হায়ারার্কি দেখা যায়। কেন উচ্চমাত্রিক শক্তিস্তরে স্ট্রং, উইক ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স একীভূত হয়ে যায়।
- ৫) এক্সট্রা ডায়মেনশনের উপস্থিতি হিগস বোসনের মধ্যে পর্যবেক্ষিত স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করতে পারে যেটি পার্টিকেলদের ভর প্রদান করে।
- ৬) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষিত ম্যাটার ও অ্যান্টি ম্যাটারের মাঝে প্রতিসাম্যতা ও অপ্রতিসাম্যতা ব্যাখ্যা করে।
- ৭) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে কেন আমাদের পর্যবেক্ষিত কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টগুলো ক্ষুদ্র, যেটাকে আমাদের মহাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের জন্য দায়ী মনে করা হয়।
- ৮) এক্সট্রা ডায়মেনশন বৃহৎ স্কেলে মহাবিশ্বের আইসোট্রোপি ও হোমোজেনিটি এক্সপ্লেইন করতে পারে।
- ৯) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের কাছে পর্যবেক্ষিত মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন এবং মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষিত টেম্পারেচার ফ্ল্যাকচুয়েশন ব্যাখ্যা করতে পারে।
- ১০) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষিত বিশাল স্কেলের কাঠামো ব্যাখ্যা করতে পারে যার মধ্যে অন্তঃর্ভূক্ত রয়েছে, গ্যালাক্সির ফরম্যাশন ও গ্যালাক্সির ক্লাস্টার।
- ১১) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের কাছে মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষিত এক্সিলারেটিং এক্সপেনশন ও কসমিক কো-ইনসিডেন্ট প্রবলেম ব্যাখ্যা করতে পারে।
- ১২) এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের কাছে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির পর্যবেক্ষিত পেনোমেনা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিলেটিভিটির সমন্বয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে পারে।
কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন গ্র্যাভিটির উইকনেস সমস্যা সমাধান করে?
অন্যান্য ফান্ডামেন্টাল ফোর্সের তুলনায় গ্র্যাভেটির দূর্বলতার কারণ হলো এক্সট্রা ডায়মেনশনের উপস্থিতি। Arkani-Hamed-Dimopoulos-Dvali (ADD) মডেল ও The Randall-Sundrum (RS) মডেল বলছে, গ্র্যাভিটি এক্সট্রা ডায়মেনশনে লিক হয়ে গিয়েছে, যে জন্য আমাদের উপলব্ধ মহাবিশ্বে আমরা গ্র্যাভিটির দূর্বলতা দেখতে পাই। ADD মডেল অনুসারে, এক্সট্রা ডায়মেনশন পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্র একটি এলাকায় কুচকে গিয়েছে। আর গ্র্যাভেটির পক্ষে এই ক্ষুদ্র এলাকা ছেদ করে এক্সট্রা ডায়মেনশনে চলে যাওয়া সম্ভব। এর ফলে আমাদের অবেক্ষিত মহাবিশ্বে গ্রেভেটি দূর্বল হয়ে যায়, যেহেতু এর মেজরিটি ভাগ দৃঢ়তা ফোর্থ ডায়মেনশন ফুটো করে অন্যান্য ডায়মেনশনে চলে যায়। RS মডেল অনুসারে, এক্সট্রা ডায়মেনশন হলো একটি বিশাল, স্বতন্ত্র, বক্র ডায়মেনশন আর গ্র্যাভিটি হলো ফাইভ ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমের ফোর্থ ডায়মেনশনাল ব্রেনে লোকালাইজড (একটি সাব-ইউনিভার্স)। এক্সট্রা-ডায়মেনশনের এই বক্রতা ব্রেনের ওপর গ্র্যাভেটিকে দূর্বল করে তোলে, আর এটা আমাদের কাছে আমাদের অবেক্ষিত মহাবিশ্বের গ্র্যাভিটির দূর্বলতা ব্যাখ্যা করতে পারে।
গ্র্যাভিটি এক্সট্রা ডায়মেনশনে কীভাবে লিক হয়েছে, কোনো উদাহরণ আছে?
ফান্ডামেন্টাল ফোর্স হিসেবে গ্র্যাভিটি স্পেস ও টাইমের সকল ডায়মেনশনেই থাকে। আমরা যে সকল এক্সট্রা ডায়মেনশন পর্যবেক্ষণ করতে পারছি না সে সকল ডায়মেনশনেও গ্র্যাভিটি রয়েছে। ADD and RS models প্রস্তাব করেছে, গ্র্যাভিটি এক্সট্রা-ডায়মেনশনে লিক হয়ে যেতে পারে। যার অর্থ হলো গ্র্যাভিটির পরিপূর্ণ ক্ষমতা আমাদের চারমাত্রিক মহাবিশ্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এজন্যই গ্র্যাভিটি আমাদের ইউনিভার্সে দূর্বল। কারণ এর ক্ষমতা এক্সট্রা ডায়মেনশনে লিক হয়ে গিয়েছে। কল্পনা কর একটি একুরিয়ামের কথা। যেটি পানি দিয়ে পূর্ণ। পানি গ্র্যাভেটিকে রিপ্রেজেন্ট করছে আর একুরিয়াম রিপ্রেজেন্ট করছে আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্বকে। যদি একুরিয়ামের নিচে একটি ছিদ্র থাকে, কিছু পানি ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যাবে আর অবশিষ্ট পানিকে দূর্বল বলে মনে হবে। যদি গ্র্যাভিটি অন্য মহাবিশ্বে লিক হয়ে যায় , আমাদের চারমাত্রিক মহাবিশ্বে এটাকে দূর্বল দেখাবে।
ব্রেন কী?
ব্রেন হলো একটি থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট যেটি সাব-ইউনিভার্স অথবা মেমব্রেনের কথা বলে যেটি হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমে অবস্থিত। কল্পনা কর, একটি মহাবিশ্বের চার মাত্রা থেকেও বেশি সংখ্যক মাত্রা রয়েছে। যেগুলো দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা ও সময়ের ঊর্ধেব। হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমে ব্রেন একটি স্লাইচ অথবা লেয়ারের মতো দেখতে, যেটি হায়ার ডায়মেনশনের সুনির্দিষ্ট কোনো একটি লোকেশন দখল করে আছে। আপনি একটি লোফ বা রুটির এক একটি স্লাইচের কথা চিন্তা করতে পারেন। লোফ রিপ্রেজেন্ট করছে হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমের আর অন্যদিকে একটি ব্রেড রিপ্রেজেন্ট করছে ব্রেনের। একটি লোফের স্লাইচ যেমন লোফের অংশ, ব্রেন হলো হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমের একটি অংশ। এক ফালি ব্রেডের যেমন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আছে যেমন শেইপ, থিকনেস অথবা টেক্সচার। ব্রেনেরও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আছে যেমন সাইজ, শেইপ ও কার্ভেচার। ফিজিক্সের কিছুকিছু মডেলে বলা হয়, আমাদের অবেক্ষিত মহাবিশ্ব হলো একটি চারমাত্রিক ব্রেন। এই দৃশ্যপটে, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স, স্ট্রং ও উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স আমাদের চারমাত্রিক ব্রেনের মধ্যে তালাবদ্ধ (locked) । গ্র্যাভেটিকে দূর্বল মনে করা হচ্ছে কারণ এর কিছু ক্ষমতা এক্সট্রা-ডায়মেনশনে লিক হয়ে গিয়েছে।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন প্রকৃতির মৌলিক বলগুলো একীভূত করে যেমন ইলেক্ট্রিসিটি ও ম্যাগনেটিজম?
এক্সট্রা ডায়মেনশনকে প্রস্তাব করা হচ্ছে প্রকৃতির ফান্ডামেন্টাল ফোর্সগুলোকে একীভূত করার একটি উপায় হিসেবে। কারণ এটি আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ফোর্সকে একীভূত করার পদ্ধতি বলে। এই ধারণা অনুসারে, প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন ফোর্স মূলত একই ফোর্সেরই এক একটি রূপ, যেই মূল ফোর্সটি অন্য কোনো ডায়মেনশনে বাস করে যেটি আমাদের পরিচিত স্পেস-টাইম ডায়মেনশনের ঊর্ধেব। এই ফ্রেমওয়ার্কে গ্র্যাভেটিকে চিন্তা করা হয় হায়ার ডায়মেনশনাল ফোর্সের একটি প্রতিভাস হিসেবে যেটি এক্সট্রা-ডায়মেনশনে অপারেট করে। যেখানে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম ও অন্যান্য ফোর্সকে চিন্তা করা হয় আমাদের চারমাত্রিক মহাবিশ্বে উচ্চমাত্রিক স্পেসের একটি প্রোজেকশন অথবা ছায়া হিসেবে।এক্সট্রা-ডায়মেনশনের এই প্রোজেকশনের প্রকৃতি কেমন সেটা এখনো আমরা বুঝে উঠতে সক্ষম হইনি। কিন্তু উচ্চমাত্রিক স্পেসে তাদের উপস্থিতির যে ধারণা তা আমাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ফোর্সের মধ্যকার সাদৃশ্যতা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং সেগুলোকে একীভূত করতে পারে একটি স্বতন্ত্র ও সুসংগত ফোর্স হিসেবে। কল্পনা কর, তুমি দ্বিমাত্রিক একটি কাগজের পাতায় বাস কর। তোমার বিশ্বে তুমি দুটি ডিরেকশনে মুভ করতে পার, ডান ও বাম অথবা উপর ও নিচে। কিন্তু তুমি সম্পূর্ণ ভাবে তৃতীয় মাত্রা অর্থাৎ ডেপথ বা গভীরতা সম্পর্কে অজ্ঞান, যেটি আমাদের দৃশ্যমান বিশ্বের ঊর্ধেব অবস্থান করে। এবার কল্পনা কর, একটি হায়ার ডায়মেনশনাল সত্তা তোমার জগতে নেমে এসেছে। তোমার জগত যেহেতু দ্বিমাত্রিক তোমার কাছে তাকেও দ্বিমাত্রিক মনে হবে। তুমি এক সিরিজ প্রোজেকশন দেখবে অথবা তোমার জগতে তার ছায়া। তুমি একটি কিউবের ওপর আলো নিক্ষেপ করলে দ্বিমাত্রিক পাতার মধ্যে তার দ্বিমাত্রিক প্রোজেকশন ও মুভমেন্ট দেখতে পাও , যদিও এটি রিয়েল বস্তু নয়। প্রোজেকশনের ভিন্ন ভিন্ন সাইজ ও শেইপ থাকে, যখন হায়ার ডায়মেনশনাল অবজেক্ট মুভ করে আপনি তার ভিন্ন ভিন্ন ডিরেকশন দেখতে পাও। একইভাবে, আমাদের চারমাত্রিক মহাবিশ্বে একই হায়ার ডায়মেনশনাল ফোর্স চারটি ভিন্ন ভিন্ন ফোর্স হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন মনে হচ্ছে কারণ আমাদের জগত চারমাত্রিক আর তাই হায়ার ডায়মেনশনাল ফোর্স যখন আমাদের চারমাত্রিক জগতের ওপর নিজেকে প্রোজেক্ট করে তখন এটি চারমাত্রিক জগতে ভেঙে যায়। আমরা তার ভিন্ন ভিন্ন রেঞ্জ ও স্ট্রেন্থ( দৃঢ়তা) দেখতে পাই। কিন্তু এই চারটি ফোর্স একই অন্তর্নিহিত ফোর্সের সাথে সম্পর্কিত। দ্বিমাত্রিক কাগজের ওপর ভিন্ন ভিন্ন ছায়া যেমন হায়ার ডায়মেনশনাল সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির সমস্যা সমাধান করতে পারে যেগুলো মহাবিশ্বের ৯৫% এলাকা দখল করে রেখেছে?
একটি উদাহরণের মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের বিষয়টি বুঝা যায় আর তা হলো ডার্ক ম্যাটার যে পার্টিকেলের তৈরি সেগুলো এক্সট্রা ডায়মেনশনে আটকে আছে কিন্তু তারপরও সেগুলো গ্র্যাভিটেশনাল ইফেক্ট রূপে আমাদের চারমাত্রিক স্পেস-টাইমকে প্রভাবিত করছে। কল্পনা কর, পানি পূর্ণ একটি ট্যাংকের ভেতর একটি মাছ সুইম করছে। ট্যাংকের বাহিরের একজন ব্যক্তির কাছে বাহির থেকে মনে হচ্ছে মাছটির ভর আছে আর এটি পানির পৃষ্ঠকে প্রভাবিত করছে। ঠিক যেমনি ডার্ক ম্যাটার হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস থেকে আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্বকে প্রভাবিত করে। যাইহোক, একজন ব্যক্তি ট্যাংকের বাহির থেকে সরাসরি মাছটিকে দেখতে পারে না, ঠিক যেমনি আমরা আমাদের মহাবিশ্ব থেকে ডার্ক ম্যাটারকে দেখতে পাচ্ছি না। মাছটি যেমন ট্যাংকের পানির ভেতর ডুবে থাকার কারণে আমরা তাকে দেখতে পাচ্ছি না, ঠিক তেমনি ডার্ক ম্যাটার এক্সট্রা ডায়মেনশনে লুকিয়ে থাকার কারণে আমরাও তাকে দেখতে পাচ্ছি না।
একইভাবে, ডার্ক এনার্জি আমাদের মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে এক্সিলারেট করছে। আমরা ডার্ক এনার্জিকে ব্যাখ্যা করতে পারি এক্সট্রা ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমের বৈশিষ্ট্য হিসেবে। কল্পনা কর, ট্যাংকের পানিগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে। একটি মাছ অন্য আর একটি মাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সম্প্রসারণ ঘটছে পানির বৈশিষ্ট্যগত কারণে যেমন প্রেসার। এটাকে আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি না কিন্তু এটি মাছের গতিশীলতার ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। ঠিক একইভাবে ডার্ক এনার্জিকে কল্পনা করা যেতে পারে এক্সট্রা ডায়মেনশনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে যেটি স্পেস-টাইমের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের অবেক্ষিত মহাবিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। একটি বিশ্লেষণ সম্ভবত আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কীভাবে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি এক্সট্রা ডায়মেনশন থেকে তৈরি হয়। কল্পনা করুন, একটি কেকের কথা যেটি আমাদের মহাবিশ্বের সামগ্রিক ভর ও শক্তি রিপ্রেজেন্ট করছে। এই কেকটি যে উপাদান দিয়ে তৈরি তার ৯৫ শতাংশ অজানা ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি দিয়ে গঠিত। আমরা যদি কেকটি কেটে একটি স্লাইচ নেই তবে সেখানে আমরা আমাদের পরিচিত কিছু উপাদান খুঁজে পাই যেমন ফ্রস্টিং ও ফ্রুট। এই জানা উপাদান আমাদের ইউনিভার্সের রেগুলার শক্তি রিপ্রেজেন্ট করছে। কিন্তু আমরা যদি কেকটি সামষ্টিকভাবে দেখি তবে আমরা দেখতে পাই এর বেশিরভাগ অংশ যে সকল উপাদানের তৈরি যেগুলো আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। উপমা হিসেবে, এক্সট্রা ডায়মেনশনকে চিন্তা করা হয় কেকের সাথে থাকা একটি লেয়ার বা আবরণ হিসেবে যেটি অজানা উপাদানগুলো ধারণ করে। যেমনিভাবে কেকের একটি টুকরা উপাদানের একটি অংশ প্রদর্শন করে, আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্ব আমাদের কাছে সামগ্রিক ভর ও শক্তির ক্ষুদ্র একটি অংশই কেবল প্রদর্শন করে, কেকের ৯৫% উপাদান লুকিয়ে রয়েছে এক্সট্রা ডায়মেনশনে।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন পার্টিকেলদের ভরের পরম্পরা ব্যাখ্যা করে এবং স্ট্রং, উইক ও ইলেক্ট্রোমেগনেটিক ফোর্সের ইউনিফিকেশন ব্যাখ্যা করে?
দুটি উপায়ে এক্সট্রা ডায়মেনশন পার্টিকেলের ভর ও ফোর্সগুলোর ইউনিফিকেশন ব্যাখ্যা করতে পারে:
- কম্পেক্টিফিকেশন: ক্যালুজা ক্লেইন থিওরি অনুসারে, এক্সট্রা ডায়মেনশনকে পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্র হিসেবে চিন্তা করা যায়, যেজন্য আমরা তাকে দেখতে পাই না। এক্সট্রা ডায়মেনশনের আকার পরমাণুর ভরকে প্রভাবিত করে। এক্সট্রা ডায়মেনশন যত বড় হবে পার্টিকেলের ভর তত কম হবে। এটা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন হিগস বোসন পার্টিকেলদের অন্যান্য পার্টিকেলের তুলনায় বেশি ভর রয়েছে।
- হায়ার ডায়মেনশনাল সিমেট্রি: গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন তত্ত্বে বলা হয়েছে, এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদেরকে বড় মাপের প্রতিসাম্যতা দিতে পারে যেটি স্ট্রং, উইক ও গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্সকে উচ্চশক্তিতে একীভূত করতে পারে। এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের বলতে পারে কেন, উচ্চমাত্রিক শক্তিতে সেগুলো একীভূত হয় আর কেন নিন্মমাত্রিক শক্তিতে সেগুলো আলাদা হয়ে যায়।
- এক্সট্রা ডায়মেনশন যত বড় হবে পার্টিকেলের ভর তত কম হবে__ এটি কোনো উদাহরণের মাধ্যমে বুঝানো সম্ভব?
কল্পনা কর, তুমি এমন একটি বিশ্বে বাস কর যেখানে সবকিছুই ফ্ল্যাট। সে জগতে সবকিছু একে অন্যের সাথে সরাসরি ইন্টারেক্ট করে। এবার কল্পনা কর, দ্বিমাত্রিক জগতে আর একটি মাত্রা যুক্ত করা হলো। বস্তুটিকে থার্ড ডায়মেনশনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা হলো যেটি ভর ও শক্তির বন্টনের জন্য তোমাকে অধিক স্পেস প্রদান করবে। এ অতিরিক্ত মাত্রা দ্বিমাত্রিক জগতে বস্তুর আচরণকে প্রভাবিত করবে।
ঠিক একইভাবে ক্যালুজা ক্লেইন থিওরি ও স্ট্রিং থিওরির এক্সট্রা ডায়মেনশন মহাবিশ্বে বস্তু ও ভরের ডিস্ট্রিবিউশন পরিবর্তন করে দেয় এবং পার্টিকেলদের আচরণকে প্রভাবিত করে যার মধ্যে তাদের ভরও অন্তর্ভূক্ত। এবার আর একটি বিশ্লেষণ অনুসরণ কর। মনে কর, তোমার একটি কক্ষ আছে সে কক্ষের দ্বিমাত্রিক ফ্লোরে একটি জীব বাস করে। এই প্রাণীটি কেবল দুটি ডায়মেনশনে চলাচল করতে পারে, বস্তুর সাথে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। কিন্তু তুমি একটি ত্রিমাত্রিক সত্তা, তুমি চাইলে রুমের সিলিঙ অথবা ফ্লোরের ওপর দিয়েও মুভ করতে পার। এবার কল্পনা কর, তোমার হাতে একটি ভারী গোলক আছে। তুমি সেটাকে ফ্লোরে রাখলে। তুমি দেখতে চাইলে কীভাবে দ্বিমাত্রিক সত্তারা রিয়েক্ট করে। গোলকের ভর যেহেতু ফ্লোরে ডিপ্রেসন তৈরি করে, এটি দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠের প্রাণীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তোমার কাছে মনে হবে, গোলকের ভর কেবল ত্রিমাত্রিক পৃষ্ঠে মুভ করেছে , এটি দ্বিমাত্রিক জগতের কোনোকিছু পরিবর্তন করেনি । একই উপায়ে এক্সট্রা-ডায়মেনশন আমাদের ইউনিভার্সের ভর ও শক্তির বন্টনে প্রভাব তৈরি করতে পারে। যেটি পার্টিকেলদের ভর ও আচরণে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। এক্সট্রা ডায়মেনশন এক্সট্রা ডিরেকশন তৈরি করে যেখানে ভর ও শক্তি মুভ করতে পারবে, এ ডায়মেনশনের আকারই নির্ধারণ করবে ভর ও শক্তির বন্টনের জন্য এখানে কী পরিমাণ স্পেস আছে। ফ্লোরে ভারী কোনো বস্তু রাখার মতোই এক্সট্রা ডায়মেনশনের সাইজ আমাদের চারমাত্রিক বিশ্বের পরমাণুর আচরণ প্রভাবিত করতে পারে, যদিও এটি আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারছি না। আরও সহজ করে যদি তুমি বিষয়টি বুঝতে চাও। কল্পনা কর, তুমি অলিম্পিক গেইমসে ট্র্যাম্পোলিনের ওপর দাঁড়িয়ে আছো। একবার যখন তুমি ট্র্যাম্পোলিনের কোনো একটি স্পোটে ঝাপ দেবে, ট্র্যাম্পোলিন সম্প্রসারিত হবে এবং সে এলাকাকে নিচের দিকে চেপে ধরবে। তুমি যত উপরের দিকে জাম্প করবে ট্র্যাম্পোলিন তত বেশি প্রসারিত হবে এবং তোমাকে নিচের দিকে ঠেলে দেবে। এখন কল্পনা কর, ট্র্যাম্পোলিন হলো আমাদের ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্বের একটি দ্বিমাত্রিক রিপ্রেজেন্টেশন। এক্সট্রা ডায়মেনশনকে ভাবা যেতে পারে থার্ড ডায়মেনশন হিসেবে যেটি উলম্বভাবে বিদ্যমান। তুমি এক্সট্রা ডায়মেনশনে যত উপরের দিকে লাফ দিবে, আমাদের ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্বে এটি ততবেশি প্রসারিত হবে এবং নিচের দিকে ঠেলতে থাকবে। এই বিশ্লেষণে, এক্সট্রা ডায়মেনশনকে চিন্তা করা যেতে পারে সাইজের ওপর ভিত্তি করে। ট্র্যাম্পোলিনের সম্প্রসারণ ও পেছনের দিকে সরে যাওয়াকে চিন্তা করা যেতে পারে পরমাণুর ভরের ওপর প্রভাব হিসেবে। এক্সট্রা-ডায়মেনশন যত বড় হবে, ট্রেম্পোলিন ততবেশি সম্প্রসারিত ও পুস ডাউন করবে, আর এতে করে পার্টিকেলের ভর হবে কম।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশনের অস্তিত্ব হিগস বোসনের পর্যবেক্ষিত স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করে যেটি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে কেন পার্টিকেল ভর লাভ করে?
হিগস বোসন হলো এমন এক পার্টিকেল যা অন্যান্য পার্টিকেলকে ভর প্রদান করে। স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, পার্টিকেল হিগস ফিল্ডের সাথে ইন্টারেক্ট করে তার ভর অর্জন করে। যা সমগ্র স্পেস-টাইমে বিস্তারিত। যখন পার্টিকেল হিগস ফিল্ডে মুভ করে তখন এটি একপ্রকার টান অনুভব করে যেটি ভরের সমানুপাতিক। হিগস বোসনের পর্যবেক্ষিত স্থিরতা এক্সট্রা ডায়মেনশন ব্যাখ্যা করতে পারে। কিছু তত্ত্বে হিগস বোসনকে পার্টিকেলদের বাউন্ড স্টেট হিসেবে চিন্তা করা হয়। হিগস বোসন যে পার্টিকেলগুলোর সাথে ইন্টারেক্ট করে তারা এক্সট্রা ডায়মেনশনে বাস করে। এ পার্টিকেলগুলো একে অন্যের সাথে ইন্টারেক্ট করে হিগস ফিল্ডকে স্থিতিশীল করে। এক্সট্রা ডায়মেনশন পার্টিকেলদের ইন্টারেক্ট করার জন্য আলাদা রুম প্রদান করে। যা হিগস বোসনকে অধিক স্থিতিশীল করে। হিগস বোসন এক্সট্রা ডায়মেনশনে লুকিয়ে থাকা পার্টিকেলদের সাথে একটি বন্ধনযুক্ত দশা__এ ধারণাটিকে বলা হয় “ কম্পোজিট হিগস” থিওরি।
এ বিষয়টিকে বুঝার জন্য একটি বিশ্লেষণ ব্যবহার করা যায়। কম্পোজিট অবজেক্টের একটি উদাহরণ হলো অণু। অনেকগুলো পরমাণুর বন্ধনে একটি অণু গঠিত হয়। একটি মলিকিউলের মতোই হিগস বোসনকে চিন্তা করা যায় এমন এক জটিল বস্তু হিসেবে যেটি এক্সট্রা ডায়মেনশনাল পার্টিকেলের সাথে একটি বন্ধন তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা কর, তোমার টেবিলের ওপর কয়েকটি বল পড়ে আছে। এ বলগুলো হলো এক্সট্রা ডায়মেনশনে বসবাসকারী পার্টিকেল। তারা একে অন্যের সাথে আকর্ষণ ও বিকর্ষণের মাধ্যমে ইন্টারেক্ট করে। এবার কল্পনা কর, একটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে তুমি দুটি পার্টিকেলকে টানছ, দুটি পার্টিকেল কাছাকাছি চলে এলো। এক্সট্রা ডায়মেনশনাল পার্টিকেল ঠিক একই উপায়ে হিগস বোসন রূপে একে অন্যের সাথে এ বন্ধন তৈরি করে। কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন হিগস ফিল্ডের পর্যবেক্ষিত স্থিরতাকে ব্যাখ্যা করে ও পার্টিকেলদের ভর দেয় এ বিষয়টি বুঝার জন্য আমরা একটি কনসেপ্ট ব্যবহার করতে পারি যেটাকে বলা হয় কম্প্যাক্টিফিকেশন। যেটি আমাদের বলে যে, এক্সট্রা-ডায়মেনশন হলো ক্ষুদ্র, সংকুচিত এবং এটাকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না। এই কম্প্যাক্টিফিকেশন হিগস ফিল্ডকে স্থিতিশীল করে, এটাকে ফ্ল্যাকচুয়েট করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ও পার্টিকেলদের ভর প্রদান করে। এখানেও এক্সট্রা ডায়মেনশনকে কল্পনা করা যায় ট্র্যাম্পোলিন হিসেবে এবং হিগস ফিল্ডকে কল্পনা করা যায় একটি বল। যদি ট্র্যাম্পোলিন ফ্ল্যাট ও মসৃণ হয়, বলগুলো ছুটতে থাকবে , সেগুলো স্থির হতে পারবে না। কিন্তু ট্র্যাম্পোলিন যদি কোথাও কোথাও কুচকে থাকে তবে বলটি সেখানে স্থির হয়ে থাকবে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের কম্প্যাক্টিফিকেশন একই পদ্ধতিতে কাজ করে। এটি হিগস ফিল্ডকে স্থিতিশীলতা প্রদান করে এবং পার্টিকেলদের স্থিতিশীল ভর প্রদান করে।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটারের অপ্রতিসাম্যতা ব্যাখ্যা করে?
ম্যাটার ও অ্যান্টি ম্যাটারের পর্যবেক্ষিত অসমতা পদার্থবিদ্যার একটি মহান রহস্য। আমাদের সাম্প্রতিক পদার্থবিদ্যার আইন অনুসারে, মহাবিস্ফোরণের পর একই পরিমাণ ম্যাটার ও অ্যান্টি ম্যাটার তৈরি হয়েছিল। যদি ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার একই পরিমাণ হয় তবে তারা একে অন্যকে বিলুপ্ত করে দেয়ার কথা। আমাদের মহাবিশ্বে কোনো ম্যাটার উপস্থিত থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু দেখছি। আমরা এখানে দেখছি, ম্যাটার অ্যান্টি ম্যাটারের তুলনায় বেশি। ক্ষুদ্র হলেও ম্যাটারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রভাব আছে আমাদের এ মহাবিশ্বে। ম্যাটার ও অ্যান্টি ম্যাটার একই হবে এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত সিপি সিমেট্রি (The combination of charge conjugation and parity symmetry)। মহাবিশ্বে ম্যাটারের আধিক্যতা দেখা যাওয়ার মানে হলো এটি প্রতিসাম্যতার লঙ্ঘন। কিছুকিছু পার্টিকেল ইন্টারেকশনে সিপি সিমেট্রি ভায়োলেট হয়। সিপি ভায়োলেশন মহাবিশ্বের শুরুর দিকে বস্তুকে প্রতি-বস্তুর ওপর অ্যাকসেস দেয় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষিত অপ্রতিসাম্যতা ব্যাখ্যা করতে পারি। এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের সিপি ভায়োলেশনের একটি মেকানিজম প্রদান করতে পারে। এটাকে এক্সট্রা ডায়মেনশনে লিক করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, পার্টিকেল ও তাদের ইন্টারেকশন আমাদের অবেক্ষিত চারমাত্রিক মহাবিশ্বের ঊর্ধেব কাজ করে। তার অর্থ হলো এই সিপি ভায়োলেশন এক্সট্রা ডায়মেনশনে ঘটে আর তারপর আমাদের চারমাত্রিক ইউনিভার্সের দিকে প্রোজেক্টেড হয় আর এভাবে প্রতিবস্তুর ওপর বস্তু অগ্রাধিকার পায়। এখানে লিক বলতে বুঝানো হয়েছে এই ইন্টারেকশন চারমাত্রিক মহাবিশ্বে লিমিটেড নয়। তার পরিবর্তে, এটি এক্সট্রা ডায়মেনশনেও সংঘটিত হয়।
- এক্সট্রা ডায়মেনশন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের পর্যবেক্ষিত ক্ষুদ্রতা এক্সপ্লেইন করতে পারে, যেটাকে মহাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের জন্য দায়ী মনে করা হয়।
কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ভ্যাকুয়াম ইউনিভার্সের শক্তির ঘনত্ব পরিমাপ করে। এই ক্ষুদ্রতা ফিজিক্সে একটি লং-স্ট্যান্ডিং সমস্যা। কিছু থিওরি অনুসারে, মহাজাগতিক ধ্রুবক শূন্যতার শক্তির ফ্ল্যাকচুয়েশন থেকে তৈরি হয়। আর এটার ম্যাগনিটিউট নির্ভর করে স্পেস-টাইমের ডায়মেনশনের ওপর। এক্সট্রা ডায়মেনশনের মডেলে, এক্সট্রা ডায়মেনশনের সাইজ কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ইফেক্টকে পাতলা করে, ফোর্থ ডায়মেনশনে এটাকে ক্ষুদ্র করে তোলে। এই দৃশ্যপটে, এক্সট্রা ডায়মেনশনের ভেতর এনার্জি ফ্ল্যাকচুয়েশন অনেক বিশাল ভলিউমে ছড়িয়ে পড়ে ও সামগ্রিক শক্তির দৃঢ়তা হ্রাস করে আর এজন্য আমাদের মহাজাগতিক ধ্রুবক এত ক্ষুদ্র(1 × 10^-52 m^-2)।
- এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদেরকে সহযোগিতা করে মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষিত আইসোট্রোপি( দিক নির্বিশেষে তারতম্যহীনতা) ও হোমোজেনিটি( সাদৃশ্যতা) ব্যাখ্যা করতে।
আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্বকে মনে করা হয়ে থাকে হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেসের প্রোজেকশন হিসেবে। যেখানে বস্তু ও শক্তির ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিসম ও সাদৃশ্যতাপূর্ণ। হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস আমাদের পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্বের আইসোট্রোপি ও হোমোজেনিটির জন্য দায়ী। এই ধারণা ফিজিক্সের তথাকথিত হরাইজন প্রবলেম সমাধান করতে পারে যেটি প্রশ্ন করে, কীভাবে মহাবিশ্বের দুটি এলাকা একে অন্যের সাথে বিরাট দূরত্বে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও একই তাপমাত্রা শেয়ার করে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের অস্তিত্ব কল্পনা করলে, হরাইজন প্রবলেম সমাধান হয়ে যায় কারণ মহাবিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দুটি এলাকায় এক্সট্রা ডায়মেনশনের ভেতর দিয়ে শক্তি ও ইনফরম্যাশন বিনিময় হয় যা মহাবিশ্বে অধিক সাদৃশ্যতাপূর্ণ বস্তু ও শক্তির বিভাজন প্রদান করে। আরও একটি উপায়ে এ বিষয়টি বুঝা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে ব্রেন কনসেপ্ট বিবেচনা করতে হবে। কিছুকিছু থিওরিতে মহাবিশ্বকে চিন্তা করা হয় হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইমে ভাসমান ব্রেন হিসেবে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের অস্তিত্ব বস্তু ও শক্তির বন্টনের একটি মেকানিজম প্রদান করে। যা আমাদের মহাবিশ্বে বৃহৎ স্কেলে দৃশ্যমান আইসোট্রোপি ও হোমোজেনিটির জন্য দায়ী। একটি বেলুনের কথা চিন্তা করুন যার ওপর পেইন্ট করা হয়েছে। যেহেতু বেলুন ফুলছে পেইন্ট সমানভাবে চারদিকে প্রসারিত হচ্ছে যার ফলে ইউনিফর্ম ও হোমোজেনিয়াস প্যাটার্ন তৈরি হচ্ছে। ঠিক একইভাবে, এক্সট্রা ডায়মেনশনের উপস্থিতি আমাদের ত্রিমাত্রিক ব্রেনে বস্তু ও শক্তির সম বন্টনের একটি উপায় প্রদান করে। যে জন্য আমরা বৃহৎ স্কেলে মহাবিশ্বে আইসোট্রোপি ও হোমোজেনিটি দেখতে পাই।
- এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের মহাবিশ্বের বৃহৎ স্কেলের স্ট্র্যাকচার ব্যাখ্যা করতে পারে যার মধ্যে গ্যালাক্সির গঠন ও ক্লাস্টার অব গ্যালাক্সি জড়িত
বিশাল মাপের স্ট্র্যাকচার যেমন গ্যালাক্সির গঠন এবং গ্যালাক্সিক ক্লাস্টার এক্সট্রা ডায়মেনশনের অস্তিত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। কিছু থিওরি অনুসারে, মহাবিশ্বের শুরুর দিকে ডেনসিটি ফ্ল্যাকচুয়েশন বা ঘনত্বের কম্পনে উচ্চমাত্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যেটি ছিল মহাবিশ্বের দৃশ্যমান কাঠামো তৈরির একটি প্রসেস। এখানে উচ্চমাত্রিক স্থান ডেনসিটি ফ্ল্যাকচুয়েশনের বৃদ্ধি ও আচরণকে প্রভাবিত করে মহাবিশ্বের প্রাথমিক গঠন তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ, এক্সট্রা ডায়মেনশন যদি যথেষ্ট বড় হয় তবে এটি ম্যাটার ও ডার্ক ম্যাটারের ভেতরকার মিথস্ক্রিয়া প্রভাবিত করবে। যা বস্তুগুলোকে স্তূপিকৃত হতে বাধ্য করবে এবং প্রথম গ্যালাক্সির বীজ বপন করবে। সময়ের সাথে, বস্তুর এই স্তূপ বৃদ্ধি প্রাপ্ত ও বিবর্তিত হবে গ্যালাক্সি ও জটিল গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের নেটওয়ার্ক হিসেবে যা আজ আমরা আমাদের এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বে পর্যবেক্ষণ করি। এছাড়া এক্সট্রা ডায়মেনশন মহাবিশ্বের দুটি এলাকার শক্তি ও মোমেন্টাম ট্র্যান্সফার করার মেকানিজম প্রদান করে। যা বিশাল স্কেলের কাঠামো রেগুলেট করে এবং মহাবিশ্বকে আইসোট্রোপিক ও হোমোজেনিয়াস রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের ধারণা মহাবিশ্বের দুটি ভিন্ন ভিন্ন এলাকার মাধ্যাকর্ষের দৃঢ়তা মোডিফাই করতে পারে। যদি এই এক্সট্রা ডায়মেনশন বড় হয়, তাদের ইফেক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং খুব সহজেই বস্তুগুলো বিভিন্ন স্থানে পুঞ্জিভূত হবে। মহাবিশ্ব চারমাত্রিক হলে যেটি সম্ভব ছিল না। এটাকে কল্পনা করার জন্য, একটি দ্বিমাত্রিক মহাবিশ্বের কথা চিন্তা কর, যেখানে বস্তু সর্বত্র সমান ভাবে বিভাজিত। এখন কল্পনা কর, তুমি সেখানে থার্ড ডায়মেনশন যোগ করেছ। যা মহাবিশ্বকে ত্রিমাত্রিক করে তোলে। এক্ষেত্রেও বস্তু সর্বত্র সমানভাবে বিভাজিত হবে। কিন্তু থার্ড ডায়মেনশন তাদেরকে আইসোলেটেড পকেট তৈরি করার অনুমোদন দেবে যেখানে বস্তুগুলো একত্রে স্তুপ তৈরি করবে। এটা ঘটবে কারণ এক্সট্রা ডায়মেনশন যোগ করার কারণে তারা এক্সট্রা ডিগ্রি ফ্রিডম পেয়েছে। একইভাবে, যে মহাবিশ্বে এক্সট্রা ডায়মেনশন আছে সেখানে বস্তু ব্রনের মতো কোথাও পুঞ্জিভূত হয়ে বস্তুর স্তুপ তৈরি করে এবং প্রথম গ্যালাক্সির বীজ বপন করে।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও রিল্যাটিভিটির অসামঞ্জস্যতা দূর করে?
কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জেনারেল রিল্যাটিভিটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দুটি তত্ত্ব । কোয়ান্টাম ফিজিক্স কাজ করে ক্ষুদ্রতর স্কেলে আর জেনারেল রিল্যাটিভিটি কাজ করে মহাজাগতিক স্কেলে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও রিল্যাটিভিটির মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা সেটা যদি তোমাকে বুঝতে হয় তবে তোমাকে বুঝতে হবে কোয়ান্টাম গ্রেভেটি সম্পর্কে। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে, বস্তু ও শক্তির উপস্থিতিতে স্পেস-টাইমে বক্রতা তৈরি হয় যা নিকটবর্তী স্যাটেলাইট অথবা লাইটকে এফেক্ট করে। যেটাকে জেনারেল রিল্যাটিভিটির ইকুয়েশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। সাধারণ আপেক্ষিকতা আমাদের বলছে স্পেস-টাইম হলো মসৃণ ও নিরবিচ্ছিন্ন একটি ম্যাট্রেসের মতো। আর অন্যদিকে কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলছে, স্পেস-টাইম মসৃণ নয়, এটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিচ্ছিন্ন। পরমাণুকে ভাঙলে যেমন ইলেক্ট্রন,প্রোটন,নিউট্রন ও কোয়ার্ক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি স্পেস-টাইমকেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে বিভক্ত করা যায়। তবে এটাকে তুমি অসীম ক্ষুদ্র ইউনিটে ভাঙতে পারবে না। স্পেস-টাইমের দৈর্ঘের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর ইউনিট হলো 10-35 meters। এটাকে বলা হয় স্পেস-টাইমের অ্যাটম বা অ্যাটম অব স্পেস টাইম। অ্যাটম অব স্পেস-টাইমের একটি উদাহরণ হলো কম্পিউটার স্ক্রিনের পিক্সেল। পিক্সেলকে যেমন কম্পিউটার স্ক্রিনের একটি ছবির ক্ষুদ্রতর ইউনিট মনে করা হয় , অ্যাটম অব স্পেস-টাইমকে চিন্তা করা হয় স্পেস-টাইমের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর বিল্ডিং ব্লক। এই অ্যাটম স্পেস-টাইমের সম্ভাব্য ইউনিট রিপ্রেজেন্ট করে যা মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক তৈরি করে। মনে রাখবে, বস্তুর পরমাণু আর স্পেস-টাইমের পরমাণু এক বিষয় নয়। স্পেস-টাইমের পরমাণু কাল্পনিক বা একটি অ্যানালজি। আমরা স্পেসের এত ক্ষুদ্রতর ইউনিট পর্যবেক্ষণ করিনি এখনো। অতএব দেখা যাচ্ছে কোয়ান্টাম থিওরি অনুসারে স্পেস-টাইম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে কোয়ান্টাইজড ও বিক্ষিপ্ত। যার অর্থ হলো এটি নিরবিচ্ছিন্ন ও কন্টিনিউয়াস কোনো ফ্যাব্রিক দিয়ে তৈরি নয়। স্পেস-টাইমের এ দৃষ্টিকোণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক দৃষ্টিকোণ। এটাকে হাইজেনবার্গের আনসার্টেইনটি প্রিন্সিপল দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। অন্যদিকে সাধারণ আপেক্ষিকতা বিশাল বিশাল অবজেক্টের আচরণ ব্যাখ্যা করে যেমন স্ট্যার, প্লানেট ও গ্যালাক্সি। এখানে স্পেস-টাইমকে ভাবা হয় স্মুথ ও কন্টিনিউয়াস ফ্যাব্রিক হিসেবে, একটি ফোর্থ ডায়মেনশনাল ফ্যাব্রিক যা বস্তু ও শক্তির উপস্থিতিতে বিকৃত বা কুচকে যায়। এ থিওরির মাধ্যমে আমরা নভোমণ্ডলের বস্তুগুলোর গতি প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারি, আমরা পারি ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করতে। প্রশ্ন হলো এখানে অসঙ্গতি কোথায়? কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের ক্ষুদ্রতর সাব-অ্যাটমিক পার্টিকেল ও তাদের মিথস্ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেয়। অন্যদিকে সাধারণ আপেক্ষিকতা আমাদের কাছে বিশাল অবজেক্টের আচরণ ও ফোর্স অব গ্র্যাভিটির ব্যাখ্যা দেয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের বলছে, একটি পার্টিকেল একইসাথে ও একইসময় অসংখ্য লোকেশনে থাকতে পারে। জেনারেল রিল্যাটিভিটি আমাদের বলছে একটি অবজেক্ট স্পেস-টাইমের ভেতর সুসংজ্ঞায়িত একটি পথ অনুসরণ করে। এটাই হলো এ দুটি তত্ত্বের মধ্যে মূল বিরোধ। যদি বস্তুর উপস্থিতিতে স্পেস-টাইম বক্র হয়ে যায় আর সাব- অ্যাটমিক পর্যায়ে একটি বস্তু একইসাথে ও একইসময় মাল্টিপল লোকেশনে থাকে তবে গ্র্যাভিটি সেখানে কীভাবে কাজ করবে? পরমাণুর সাথে গ্র্যাভিটিও কী ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে চলে যাবে? আর ঠিক কীভাবে একটি পার্টিকেল একইসাথে ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে চলে যেতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো এক্সট্রা-ডায়মেনশন। কিন্তু কীভাবে? সে প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার পূর্বে চলুন আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করি।
- যদি স্পেস-টাইম অ্যাটম অব স্পেস-টাইমের তৈরি হয় তবে অ্যাটম অব স্পেস-টাইম কোথা থেকে তৈরি হলো?
স্পেস-টাইমের পরমাণু কোথা থেকে এসেছে তা এখনো একটি থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট। আমরা এখনো এটি উদ্ভাবন করতে ও বুঝতে পারিনি। কিছু থিওরি দাবি করছে, স্পেস-টাইমের পরমাণু কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এগুলো মহাবিশ্বের মৌলিক দৃষ্টিকোণ আর এটি সবসময় মহাবিশ্বে ছিল। আমাদের কাছে সাম্প্রতিক এ ধারণাটির সাপেক্ষে কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। স্পেস-টাইমের প্রকৃতি বুঝার জন্য আমাদের আরও গভীরভাবে গবেষণা করতে হবে। আরও একটি প্রশ্ন আসে, যদি স্পেস-টাইম পরমাণুর মতো কাল্পনিক ইউনিট দিয়ে তৈরি হয় তবে কীভাবে বস্তুর পরমাণু প্রথম তৈরি হলো? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বস্তুর উদ্ভবকে স্পেস-টাইমের উদ্ভবের সাথে জোড়া লাগানোর দরকার নেই। আমাদের সাম্প্রতিক থিওরি অনুসারে, বস্তু ও শক্তি মহাবিস্ফোরণ নামক একটি প্রসেসের ভেতর দিয়ে তৈরি হয়েছিল। যেখানে বিপুল পরিমাণ শক্তি বস্তুতে কনভার্ট হয় অথবা উচ্চশক্তির পার্টিকেল কোয়ালিশন থেকে নতুন নতুন পার্টিকেল তৈরি হয়। বস্তু, শক্তি এবং স্পেস-টাইমের মধ্যে সম্পর্ক কি তা এখনো একটি অনগোয়িং রিসার্চ অ্যারিয়া। এটা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা ফিজিক্সের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আরও একটি প্রশ্ন এই মুহূর্তে আমাদের মনে উঁকি দিতে পারে, প্রথমে কে এসেছিল? ইউনিট অব স্পেস-টাইম নাকি বস্তুর পরমাণু?
স্পেস-টাইমের উৎপত্তি ফিজিক্সের একটি চলমান ডিবেট ও রিসার্চ। সাম্প্রতিক কিছু থিওরি আমাদের কাছে বস্তুর উদ্ভব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। যেখানে মহাবিস্ফোরণ অন্তর্ভূক্ত। এই থিওরি অনুসারে, ম্যাটার এসেছিল একটি প্রাথমিক সিঙ্গুয়ালারিটি থেকে। আবার ইনফ্ল্যাশনারী মডেল অনুসারে, বস্তু ও শক্তি তৈরি হয়েছিল আদি মহাবিশ্বের কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন থেকে। কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির সাথে স্পেস-টাইমের প্রকৃতিও বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করছেন। কিছু কিছু থিওরি অনুসারে, স্পেস-টাইম পূর্ব থেকে উপস্থিত কোনো স্ট্র্যাকচার থেকে তৈরি হয়েছে , যেখানে অন্যান্য থিওরি দাবি করছে, স্পেস-টাইম হলো মহাবিশ্বের মৌলিক বৈশিষ্ট্য, এটি সবসময় উপস্থিত ছিল। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বলছে, অ্যাটম অব স্পেস-টাইম মহাবিস্ফোরণের পরই তৈরি হয়েছিল আর মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সিঙ্গুলারিটি থেকে যার আগে স্পেস-টাইম ছিল না। অন্যান্য থিওরি যেমন ইটারনাল ইনফ্ল্যাশন থিওরি যেটি আন্ড্রো লিন্ডে ১৯৮০ সালে প্রস্তাব করেছিলেন, এ তত্ত্ব অনুসারে, স্পেস-টাইম সবসময় উপস্থিত ছিল , আর মহাবিস্ফোরণ খুব সিম্পলি মহাবিশ্বের শুরু আর বস্তু ও শক্তির উদ্ভব হয়েছিল স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের ভেতর ফ্ল্যাকচুয়েশন থেকে। এখন তুমি প্রশ্ন করতে পার, কেন স্পেস-টাইমের ফ্ল্যাকচুয়েশন ঘটছে? এটা মূলত স্পেস-টাইম ফ্যাব্রিকের কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন যেটি কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার একটি রেজাল্ট। কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে, পার্টিকেল ও ফিল্ড সুনির্দিষ্ট কোথাও লোকালাইজড নয়। আর এজন্য স্পেস-টাইমের জ্যামিতিতে ফ্ল্যাকচুয়েশন তৈরি হয়। কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির অনেকগুলো তত্ত্বে এ ধারণাটি মৌলিক যেমন স্ট্রিং থিওরি। স্ট্রিং মহাবিশ্বের স্পেস-টাইমের ফরম্যাশন তৈরি করার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে যেমন গ্যালাক্সি ও গ্যালাক্সিক ক্ল্যাস্টার। এখন কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন। কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা কোথা থেকে এলো? এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি ফান্ডামেন্টাল ফিচার। যেটি আমাদের বলছে, কিছুকিছু ভৌত বৈশিষ্ট্য যেমন একটি অতি-পারমাণবিক কণিকার পজিশন ও মোমেন্টাম একই সময় সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে না। এই অনিশ্চয়তা জন্ম হয় বস্তুর ওয়েভ পার্টিকেল ডুয়ালিটি থেকে যেটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সম্ভাবনাময় প্রকৃতির একটি প্রভাব। আমরা এখনো জানি না, কেন কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা কাজ করছে কিন্তু এটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও কোয়ান্টাম বিশ্বের একটি ভেরিফায়েড ফিচার।
- কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি সহজ ভাবে বুঝার উপায়?
মনে কর, তোমার কাছে একটি বল আছে। তুমি সেটাকে একটি টার্গেট পয়েন্টের দিকে ছুঁড়ে মারতে চাও। তোমার টার্গেট পয়েন্ট যত কাছে হবে তোমার সেটাকে হিট করা তত সহজ হবে। আর টার্গেট পয়েন্ট যত দূরে হবে সেটাকে হিট করা তোমার জন্য তত কঠিন হবে। এভাবেই মূলত গ্র্যাভিটি কাজ করে। দুটি বস্তু যত কাছে হয় তাদের মধ্যকার গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স তত বেশি হয়। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রভাব পারমাণবিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স অনুসারে, আমরা একটি বস্তুকে যেখানে প্রত্যাশা করছি সে সবসময় সেখানে থাকবে তা নয়, সে একই সময় ভিন্ন ভিন্ন স্থানেও থাকতে পারে। আর এটা আমাদের পক্ষে বুঝা খুবই কঠিন এই স্কেলে গ্র্যাভিটি কীভাবে কাজ করবে। এ বিষয়টি বুঝার জন্য আরও সহজ একটি উদাহরণ দেয়া যায়। মনে কর, তোমার কাছে দুটি খেলনার বল আছে। বল দুটি একটি সূতা দিয়ে বাঁধা। তুমি যখন একটি বলকে অন্যটির দিকে টানবে, ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স অনুসারে, দ্বিতীয় বলটি টেনশন বা টানের প্রভাবে প্রথমটির দিকে ছুটে আসবে। একই ঘটনা ঘটে মহাবিশ্বের বিশাল বিশাল অবজেক্ট যেমন গ্রহ-নক্ষত্রদের সাথে। তারা একে অন্যকে ফোর্স অব গ্র্যাভিটির মাধ্যমে টানে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে, বলটির পজিশন ও মোমেন্টাম অনিশ্চিত এবং এটি মাল্টিপল স্টেটে থাকতে পারে। প্রশ্ন হলো, একটি বল যদি একইসাথে ও একইসময় অসংখ্য লোকেশনে অবস্থান করে তবে তুমি তাদেরকে কিভাবে সূতা দিয়ে একে অন্যের দিকে টানবে? আর এজন্যই যখনই আমরা মাধ্যাকর্ষের কনসেপ্টকে এ ধারণাটির সাথে কম্বাইন করার চেষ্টা করি, আমাদের পক্ষে এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে ওঠে যে, কীভাবে এ পার্টিকেলগুলো একে অন্যের সাথে ইন্টারেক্ট করে।
- কীভাবে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে মাধ্যাকর্ষের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে?
কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির উদ্দেশ্য হলো ক্ষুদ্রতম স্কেলে মাধ্যাকর্ষের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা। যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জেনারেল রিল্যাটিভিটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে পার্টিকেলদের তরঙ্গের মতো বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং একইসময় মাল্টিপল স্টেটে অবস্থান করতে পারে। এটি পার্টিকেলদের পজিশন ও মোমেন্টামের ভেতর মৌলিক অনিশ্চয়তা তৈরি করে। যেটাকে আমরা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা বলে জানি। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বে, মাধ্যাকর্ষকে আলোচনা করা হয় স্থান ও কালের বক্রতা হিসেবে এবং বস্তু বক্র স্থানকালের ভেতর জিওডেসিক (বক্র স্থানে দুটি বিন্দুর মধ্যকার সংক্ষিপ্ত পথ যেমন গোলক) পথ অনুসরণ করে। কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি চেষ্টা করছে, এ দুটি ধারণাকে একীভূত করতে মাধ্যাকর্ষকে তরঙ্গের মত একটি ফিল্ড হিসেবে কোয়ান্টাইজ করে। এই ছবিতে, স্পেস-টাইম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণু বা পিক্সেল দিয়ে তৈরি আর মাধ্যাকর্ষ হলো স্পেস-টাইমের পরমাণুর সাথে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের যে কোনো অবজেক্টের মিথস্ক্রিয়া। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিল্যাটিভিটিকে সমন্বয় করে কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষ থিওরি মাধ্যাকর্ষের প্রকৃতি ও স্পেস-টাইম সম্পর্কে আমাদের অধিক সম্পূর্ণ ও সুসঙ্গত এক্সপ্লেইনেশন প্রদান করছে। এ বিষয়টি বুঝার জন্য একটি রাবারের পাতার কথা। এই রাবার হলো স্পেস-টাইম। মনে কর, রাবারের পাতার উপর একটি বল রাখা হয়েছে, এই বলটি রিপ্রেজেন্ট করছে একটি গ্রহের। এই বলটির উপস্থিতি রাবারের পাতাটিকে বিকৃত করে দেবে। বলের চারপাশে ডিপ্রেশন বা চাপ সৃষ্টি করবে। এই ডিপ্রেশনকে আমরা চিন্তা করতে পারি গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড হিসেবে। যেটি অন্যান্য অবজেক্টকে আকর্ষণ করতে পারে। উপমা হিসেবে , স্পেস-টাইমের এক একটি ইউনিট রাবারের পাতার অ্যাটমকে রিপ্রেজেন্ট করছে। রাবারের পাতার পরমাণুগুলো যখন বলের( গ্রহ) সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে তখন পাতাটির ভেতর বিকৃতি তৈরি হচ্ছে আর এই ডিফরম্যাশন বা বিকৃতি থেকে জন্ম নিচ্ছে গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড। এবার তোমার বুঝার স্বার্থে আর একটি উদাহরণ দিচ্ছি, মনে কর, একটি ট্র্যাম্পোলিনের ওপর একটি বল রাখা আছে। বলের ওজন ট্র্যাম্পোলিনকে চাপ দেবে, ট্রেম্পোলিন যখন কুচকে নিচের দিকে গেঁথে যাবে, তার চারপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুগুলো যেমন মার্বেল অথবা অন্যকিছু নিচের দিকে ঘুরতে থাকবে, এটা ঘটবে কুচকানো ট্র্যাম্পোলিন থেকে সৃষ্ট স্লোপ বা ঢালের কারণে। এক্ষেত্রে, ট্র্যাম্পোলিন রিপ্রেজেন্ট করছে স্পেস-টাইমের আর বল রিপ্রেজেন্ট করছে গ্রহ-নক্ষত্রের। ট্র্যাম্পোলিনের ভেতর যে কুচকানো ঢাল বা স্লোপ তৈরি হয়েছে সেটাকে দেখা হয় স্পেস-টাইম অ্যাটমের সাথে বৃহৎ বস্তু যেমন একটি গ্রহের ইন্টারেকশনের ফলাফল হিসেবে।
- কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন এ দুটি ক্ষেত্রকে একত্রিত করে?
কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিল্যাটিভিটির সমন্বয়ের একটি উদাহরণ হলো ক্যালুজা ক্লেইন থিওরি। যেটি আমাদের বলে যে এক্সট্রা ডায়মেনশন পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্র স্কেলে কুচকে গিয়েছে যেটা আনঅবজার্ভেবল সাইজ। এক্সট্রা ডায়মেনশন আমাদের বলছে, যদি দৈর্ঘ,প্রস্থ ও উচ্চতার বাহিরে আর কোনো ডায়মেনশন থেকে থাকে তবে বস্তু ও শক্তি এক্সট্রা ডায়মেনশন দ্বারা প্রভাবিত হবে। আর এভাবে আমরা কোয়ান্টাম মেকানিকস ও রিল্যাটিভিটিকে সমন্বয় করতে পারব। যদি এক্সট্রা ডায়মেনশন খুবই ছোট হয় তবে এটি ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন ক্ষুদ্রতর স্কেলে উপ-পারমাণবিক কণিকারা বিদঘুটে ও অনিশ্চিত আচরণ করে। একই সময় এক্সট্রা ডায়মেনশন যদি বড় হয় তবে এটি আমাদের ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন বিশাল বস্তু মাধ্যাকর্ষ বল দ্বারা প্রভাবিত হয়। এভাবে এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও সাধারণ আপেক্ষিকতার মাঝখানে সেতু তৈরি করে। কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষের পেছনে ঠিক এ আইডিয়াটি কাজ করছে। মনে কর, তুমি একটি দ্বিমাত্রিক কাগজের পাতার উপর দাঁড়িয়ে আছো। তুমি যদি পাতাটির ওপর একটি ছোট বল রাখ ও ফোর্স অ্যাপ্লাই কর, বলটি স্ট্রেইট লাইন অনুযায়ী মুভ করবে। কিন্তু তুমি যদি একজন বড় মানুষ রাখ , এবং তার ওপর একই ফোর্স অ্যাপ্লাই কর মানুষটির ভর পাতাটি কুচকে দেবে আর এই বক্রতার কারণে তার গতিও প্রভাবিত হবে। একইভাবে, একটি হায়ার ডায়মেনশনাল স্পেস-টাইম যেখানে এক্সট্রা ডায়মেনশন আছে, বস্তুর উপস্থিতি এক্সট্রা ডায়মেনশনকে বক্র করে দেবে এবং বলটির মোশন প্রভাবিত হবে। আর এ পদ্ধতিতে, এক্সট্রা ডায়মেনশন কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিল্যাটিভিটিকে একীভূত করবে। কীভাবে এক্সট্রা ডায়মেনশন ক্ষুদ্রতর স্কেলে পার্টিকেলদের প্রভাবিত করবে সেটা চারমাত্রিক মহাবিশ্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এক্সট্রা ডায়মেনশনকে দেখা যেতে পারে হিডেন ভ্যারিয়েবল হিসেবে যা ক্ষুদ্রতর স্কেলে উপ-পারমাণবিক কণার অদ্ভুত ও অনিশ্চিত আচরণ ব্যাখ্যা করবে। কল্পনা কর, একটি ক্ষুদ্র এক্সট্রা ডায়মেনশনের কথা যেটি কম্প্যাক্ট বা সংকুচিত অবস্থায় পেঁচিয়ে আছে। বক্র পথে একটি বল যেমন ঘুরতে থাকে সেরকম। এই মুভমেন্ট এক্সট্রা ডায়মেনশনকে নিউ ভ্যারিয়েবল সূচনা করার অনুমোদন দেবে। যা ক্ষুদ্রতর স্কেলে উপ-পারমাণবিক কণার অদ্ভুত ও অনিশ্চিত আচরণ বুঝতে সহযোগিতা করবে। যে ঘটনাটি আমরা আমাদের চারমাত্রিক ইউনিভার্স থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারব না। একইসময়, যদি বড় আকারের কোনো এক্সট্রা ডায়মেনশন থাকে সেটি আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করবে কেন বিশাল বস্তুগুলো সাধারণ আপেক্ষিকতার আইন মেনে চলে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের পেছনে মূল ধারণা হলো এই যে এটি আমাদের স্পেস-টাইমের কমপ্লিট ডেসক্রিপশন প্রদান করবে। সাধারণ আপেক্ষিকতায় বস্তু বক্রপথ অনুসরণ করে যা যে বক্রতা নির্ধারিত হয় বস্তু ও শক্তির উপস্থিতির প্রভাবে। এক্সট্রা ডায়মেনশনের উপস্থিতি এই বক্রতাকে মোডিফাই করবে, আর কীভাবে বিশাল অবজেক্ট মুভ করে তার আরও উন্নত ব্যাখ্যা প্রদান করবে। বিষয়টি বুঝার জন্য আমি তোমাকে আরও একটি উদাহরণ দিচ্ছি, মনে কর, তোমার কাছে একটি কাগজের পাতা আছে। এই কাগজের পাতা হলো ত্রিমাত্রিক মহাবিশ্ব। তুমি যদি এর পৃষ্ঠে একটি ভারী বল রাখ, তার প্রভাবে পৃষ্ঠটি বক্র হয়ে যাবে, এতে করে ডিপ্রেশনও তৈরি হবে। এই ডিপ্রেশন রিপ্রেজেন্ট করছে বিশাল স্কেলের মাধ্যাকর্ষ ক্ষেত্রকে। এবার কল্পনা কর, এই পৃষ্ঠটি সমতল বা ফ্ল্যাট নয় বরং এটি পরমাণুর মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বল দিয়ে তৈরি, যেগুলো ঘনষ্ঠভাবে প্যাকেট করা। এবার তুমি যদি এই পৃষ্ঠটির উপর একটি ভারী লোহার বল রাখ, তার প্রভাবে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বলগুলো স্থানান্তরিত ও গতিশীল হবে (shift and move) । আর এতে করে পৃষ্ঠটির সামগ্রিক শেইপ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটাই ক্ষুদ্রতর স্কেলে মাধ্যাকর্ষ বা গ্র্যাভিটির প্রতিনিধিত্ব করছে। যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স তার দায়িত্ব পালন করে।
এই ছবিতে, স্পেস-টাইম হলো ছোট ছোট গুড়া বা দানার তৈরি । এই গুড়াগুলোর সাথে যখন বস্তু মিথস্ক্রিয়া করে তার রেজাল্ট হিসেবে মাধ্যাকর্ষ বেরিয়ে আসে। তুমি যদি এ মুহূর্তে এক্সট্রা ডায়মেনশন যোগ কর, তুমি এই গুড়াগুলোকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে, সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম ফিজিক্সের প্রেডিকশনকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে।
- পার্টিকেল একইসাথে ও একইসময় অসংখ্য স্থানে থাকতে পারে। যদি তাই হয় অসংখ্য ডায়মেনশনে থাকা সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। এটি কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার একটি প্রভাব। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমাদের বিবৃতি দেয়, পার্টিকেলের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন পজিশন ও মোমেন্টাম, সুনির্দিষ্টভাবে একইসময় জানা যায় না। এর অর্থ হলো, পার্টিকেল একই সময় বিভিন্ন লোকেশনে থাকতে পারে। একটি পার্টিকেল একইসাথে মাল্টিপল লোকেশনে অবস্থান করতে পারে__ এই ধারণাটি কোয়ান্টাম সুপারপজিশন বলে পরিচিত। যখন আমরা স্পেসের মাল্টিপল ডায়মেনশনের কথা বিবেচনায় নিব, একই ধারণা অ্যাপ্লাই করা সম্ভব যার অর্থ হলো একটি পার্টিকেল একইসাথে ও একইসময় কেবল চারমাত্রিক জগতের দুটি স্থানে নয়, মাল্টিপল ডায়মেনশনেও অবস্থান করতে পারে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সুনির্দিষ্ট কিছু ইন্টারপ্রিটেশন এই বিষয়টির অনুমোদন দিচ্ছে। যেটি আমাদের বলছে, একটি পার্টিকেল একইসাথে মাল্টিপল ডায়মেনশনের মাল্টিপল লোকেশনে থাকতে পারে। কোয়ান্টাম সুপারপজিশন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক দৃষ্টিকোণ। তবে তোমাকে মনে রাখতে হবে এটি এখনো বিজ্ঞানের একটি অ্যাকটিভ রিসার্চ। আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই ইন্টারপ্রিটেশনগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের সাথে খুব বিতর্ক চলছে।
- এক্সট্রা ডায়মেনশন তাহলে আমাদেরকে সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সমন্বয় করার জন্য এক্সট্রা ডিগ্রির ফ্রিডম দেয়?
দূর্ভাগ্যবশত, এক্সট্রা ডায়মেনশনের সাথে সম্পৃক্ত গণিত খুবই জটিল ও দুর্বোধ্য। এমনকি যাদের ম্যাথ ও ফিজিক্সের স্ট্রং ব্যাকগ্রাউন্ড আছে তাদের জন্যেও এটা কঠিন। সাধারণত এক্সট্রা ডায়মেনশনের সাথে জড়িত যে ম্যাথমেটিক্যাল মডেল তা জটিল গণিত ও বিমূর্ত কনসেপ্ট দ্বারা গঠিত। আর এজন্য তোমার ম্যাথম্যাটিক্স ও ফিজিক্স দুটি ফিল্ডেই ডিপ আন্ডারেস্টেন্ডিং প্রয়োজন হবে। যাইহোক, আমি তোমাকে একটি সিম্পল চাইল্ড ফ্রেন্ডলি এক্সপ্লেইনেশন দিব। এক্সট্রা ডায়মেনশনকে তুমি স্পেসের অতিরিক্ত ডিরেকশন হিসেবে চিন্তা করতে পার। যা আমাদের ত্রিমাত্রিক বিশ্বের দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতার ঊর্ধেব। কল্পনা কর, তুমি ডানে ও বামে, উপরে ও নিচে নয় শুধু তুমি ফোর্থ ও সিক্সথ ডায়মেনশনেও মুভ করতে পার! স্পেসের ডায়মেনশন যখন বেড়ে যায় তখন পার্টিকেলরা আরও অজস্র উপায়ে মুভ করতে পারে ও বিভিন্ন উপায়ে মিথস্ক্রিয়া করার ফ্রিডম পায়। আর এভাবেই আমরা ক্ষুদ্রতর স্কেলে পার্টিকেলদের অদ্ভুত আচরণ ও বিশাল স্কেলে সাধারণ আপেক্ষিকতাকে এক্সপ্লেইন করতে পারি। এ বিষয়টি বুঝার একটি উপায় আছে। ত্রিমাত্রিক বিশ্বে তিনটি ডিরেকশন আছে ( ডান-বাম, উপর-নিচ, সামনে-পেছনে) যেখানে একটি পার্টিকেল অবস্থান করে। যাইহোক, যদি এক্সট্রা ডায়মেনশনের অস্তিত্ব থাকে, পার্টিকেলের পক্ষে চারমাত্রিক বিশ্বেও অবস্থান করা সম্ভব। এতে করে পার্টিকেলটি একইসাথে ও একইসময় ভিন্ন ভিন্ন প্লেসে থাকার ফ্রিডম পায়। এটি হলো ফিজিক্সের এক্সট্রা ডায়মেনশনের মৌলিক ধারণা। যাইহোক, মনে রেখ, এটি একটি থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট। আর কখনো এটা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এবার কল্পনা কর, কাগজের পাতার তৈরি একটি দ্বিমাত্রিক বিশ্বের কথা। এই বিশ্বে, একটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট সময় একটি স্থানে থাকতে পারে। সে হয়তো ডান পাশে থাকবে অথবা বাম পাশে। যদি তুমি এখানে থার্ড ডায়মেনশন অর্থাৎ হাইট যোগ কর, বস্তুটি এখন একইসাথে মাল্টিপল প্লেসে অবস্থান করতে পারবে। উদাহরণস্বরুপ, বস্তুটি এখন কাগজের ডান পাশেও আছে আবার একই সময় কাগজটির উপরে ও নিচে। আর এ পদ্ধতিতে এক্সট্রা ডায়মেনশন পার্টিকেলকে মাল্টিপল লোকেশনে থাকার অনুমোদন দেয়।
আরও পড়ুন: