এক্টোলাইফ হলো একটি কনসেপ্ট যেখানে পিতা-মাতা আর্টিফিশিয়াল গর্ভাশয়ের ভেতর কাস্টমাইজড বেবি উৎপাদন করতে পারবে। এক্টোলাইফ আপনাকে বিভিন্ন প্রকার প্যাকেজ অফার করবে। অনেকটা ইন্টারনেট প্যাকেজের মতো। এক একটি প্যাকেজে এক একপ্রকার সুবিধা। যেমন একটি প্যাকেজের নাম এলিট প্যাকেজ। আপনি যদি এলিট প্যাকেজ ক্রয় করেন তবে আপনি আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের ইন্টিলিজেন্স লেভেল নিজেই নির্বাচন করতে পারবেন। আপনার পছন্দ অনুযায়ী আপনি তার হেয়ার স্টাইল, আই কালার, হাইট, ফিজিক্যাল ফিটনেস ও স্কিন টোন নির্বাচন করতে পারবেন। এক্টোলাইফ হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আপনার সন্তানের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার আপনি নিজেই। একটা সময় মানুষ আনকনসাসলি সন্তান জন্ম দিত, তাদের সন্তানের জিনোমের উপর তাদের কনসাস কোনো অ্যাকসেস ছিল না, এক্টোলাইফ এই সমস্যাটি দূর করবে। এই যেন দ্য ম্যাট্রিক্স মুভির বাস্তব প্রয়োগ যেখানে পডের ভেতর সন্তান উৎপাদন করা হয়েছিল।
এক্টোলাইফ কনসেপ্ট এসেছিল প্রডিউসার, ফিল্ম মেকার, সায়েন্স কমিউনিকেটর এবং মলিকিউলার বায়োলজিস্ট হাশেম আল-গালিলির পক্ষ থেকে। তাই এই ধারণাটিকে তার ব্রেনচাইল্ড বলা হয়।
কোথায় থেকে এলো এক্টোলাইফ কনসেপ্ট?
এক্টোলাইফ কনসেপ্ট এসেছিল হাশেম আল গালিলির প্রায় ৫০ বছরের শ্বাসরূদ্ধকর গবেষণা থেকে। এই পদ্ধতিতে ট্র্যান্সপারেন্ট পডের ভেতর ল্যাবরেটরি পরিবেশে এক একটি বিল্ডিং-এ প্রতি বছর ৩০,০০০ শিশু বেড়ে উঠবে। এই পডের ভেতর ঠিক একই পরিবেশ তৈরি করা হবে যে পরিবেশ মায়ের গর্ভে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। পার্থক্য হলো, আপনি পেটের ভেতর সন্তানের বৃদ্ধি অবজার্ভ করতে পারেন না কিন্তু এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন আপনি আপনার সন্তানের একটু একটু করে বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। আপনি নিজের চোখেই দেখবেন কীভাবে একটি ভ্রুণ ধীরে ধীরে একটি পরিপূর্ণ মানব শিশুতে পরিণত হয়। আপনি রিয়েল টাইমেই আপনার ক্রোমোজমের পরিণত হওয়ার দৃশ্য দেখবেন। এই ডেটা আপনি আপনার মোবাইল ফোন অ্যাপ দিয়েও চাইলে দেখতে সক্ষম। আমরা জানি, শিশুরা মাতৃগর্ভ থেকেই ভাষা শিখে, তারা গর্ভকালীন বিভিন্ন সাউন্ড শনাক্ত করার দক্ষতা অর্জন করে। আপনি এই পদ্ধতিতে আপনার সন্তানের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। পডের ভেতর বিভিন্ন প্রকার সুন্দর মিউজিকের ব্যবস্থা থাকবে। আপনি চাইলে আপনার সন্তানকে ঘরে বসেই সুন্দর সুন্দর গান গেয়ে শোনাতে পারবেন। আর এই পদ্ধতিতে জন্মের পূর্বেই মায়ের সাথে বেবির একটি গুড কমিউনিকেশন গড়ে উঠবে। আপনি চাইলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের মাধ্যমে আপনার শিশুর ইমোশন অনুভব করতে পারবেন। সে কি দেখছে ও শুনছে তা একইসাথে আপনিও দেখবেন ও শুনতে পাবেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট আপনার মধ্যে সন্তানের মুভমেন্টের ফিজিক্যাল সেনসেশন তৈরি করতে পারবে।

এছাড়া ২৪ ঘন্টা পডের ভেতর ভ্রুণের বিকাশ প্রক্রিয়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স পর্যবেক্ষণ করবে এবং কোনো জেনেটিক্যাল অ্যাবনরমালিটি দেখার সাথেসাথেই সে রিপোর্ট করবে। এক্টোলাইফ আপনাকে সেইফ ও পেইন ফ্রি-একটি উপায়ে বেবি ডেলিভার করবে যেখানে আপনি কোনো প্রেসার অনুভব করবেন না। এই ডেলিভারি প্রসেস একদমই সহজ। আপনি খুব স্মুথলি একটি বাটন প্রেস করে এই কাজটি করতে পারেন। অ্যামানিয়টিক ফ্লুয়েডগুলো বেরিয়ে যাওয়ার পর আপনি খুব ইজিলি আপনার বেবিকে পড থেকে রিমুভ করতে পারবেন। Read More: CRISPR জিন এডিটিং এন্ড ট্রান্সহিউম্যান
আর্টিফিশিয়াল ওম্ব
প্রতিটি পড দুটি বায়ো-রিয়েক্টরের সাথে জড়িত। প্রথম বায়োরিয়েক্টর অক্সিজেন ও নিউট্রিয়েন্টস ধারণ করে। যেগুলো একটি আর্টিফিশিয়াল নাভিরজ্জুর মাধ্যমে সাপ্লাই করা হয়। এই বায়োরিয়েক্টরের মধ্যে লিকুইড সল্যুশনও রয়েছে যেটি মায়ের জরায়ুর চারপাশের অ্যামানিয়টিক ফ্লুয়েডের মতো সার্ভ করা হয়। এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ ভাইটাল হর্মোন, গ্রোথ ফ্যাক্টর ও অ্যান্টিবডিস। যেটি আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বজায় রাখে। এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি বেবি তাদের উপযোগী নিউট্রিয়েন্ট রিসিভ করতে পারে। দ্বিতীয় বায়োরিয়েক্টর ব্যবহার করা হয় এলিমিনেটর হিসেবে। এটি শিশুদের উৎপন্ন যে কোনো বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করতে পারে। আর্টিফিশিয়াল নাভিরজ্জুর মাধ্যমে শিশুটি তার বর্জ্যগুলো সেকেন্ড বায়োরিয়েক্টরে রিলিজ করতে পারে। ডেলিকেট এনজাইমের মাধ্যমে এই সেকেন্ড রিয়েক্টর বর্জ্য পদার্থগুলো রিসাইকেল করতে পারে আর তারপরে সেটাকে উপকারী নিউট্রিয়েন্টসে পরিণত করতে পারে। এ পদ্ধতিতে স্থির ও টেকশই পুষ্টির সরবরাহ বজায় রাখা যায়।

আল-গালিলির মতে, ইথিক্যাল রেসট্রিকশন তুলে দিলে আগামী দশ বছরের মধ্যেই কৃত্রিম গর্ভাশয়ের ফ্যাসিলিটি পাওয়া যাবে। এই পদ্ধতিতে যে সকল ফিচারগুলো রয়েছে সেগুলো ১০০ ভাগ বিজ্ঞানসম্মত যেগুলো বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়াররা বহু পূর্বেই অ্যাসিভ করেছিলেন। শুধু একটা জিনিসই এখন অবশিষ্ট আর তা হলো সকল প্রকার ফিচার একসাথে একটি ডিভাইসে সমন্বয়। যদি ইথিক্যাল প্রতিবন্ধকতাগুলো রিলাক্স হয় তবে খুব দ্রুতই মানুষ এই নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেদের সমন্বয় করে নিবে। বর্তমানে ১৪ দিনের বেশি সময়ের জন্য মানব ভ্রুণ নিয়ে কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়্ না। ১৪ দিন পর ভ্রুণটি ধবংস হয়ে যায় ইথিক্যাল উদ্বেগের কারণে।
এলিট প্যাকেজের সুবিধা
এলিট প্যাকেজ আপনাকে জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভ্রূণ তৈরির অনুমোদন দেবে, কৃত্রিম গর্ভাশয়ে সে ভ্রুণটি উপস্থাপন করার পূর্বে। পিতামাতা তার বেবির ইন্টিলিজেন্স লেভেল নির্বাচন করবে। একইসাথে তার হাইট, স্কিন টোন, আই কালার ও ফিজিক্যাল দৃঢ়তা সবকিছু। আর এজন্য CRISPR-Cas 9 জিন এডিটিং পদ্ধতিকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। আপনি আপনার সন্তানের জিনোমের ৩০০ জিনের কাছাকাছি বিস্তৃত জিন এডিট করতে পারবেন, আপনার পছন্দ অনুযায়ী তার বডি সেট আপ করবেন। এলিট প্যাকেজের মাধ্যমে পিতামাতা জেনেটিক্যাল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত যেকোনো ডিজিজ ফিক্স করতে পারবে।
কেন আর্টিফিশিয়াল গর্ভাশয় প্রয়োজন?
এক্টোলাইফ প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত জটিলতায় না গিয়েই আপনাকে সন্তান তৈরি করার অনুমোদন দেবে। জাপান, বুলগেরিয়া ও সাউথ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যার হ্রাস প্রতিরোধ করতে পারবে। যে সকল মানুষ বায়োলজিক্যালি বন্ধ্যা তারাও এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেবে। জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্ত নারীরা কোনোপ্রকার চিন্তা ছাড়াই তাদের জরায়ু রিমুভ করতে পারবে। তবে এক্সপার্ট বলছেন, এই প্রযুক্তি এখনো কার্যকর করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সূত্রমতে, প্রতি বছর প্রায় ৩০,০০০ শিশু গর্ভকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এক্টোলাইফ এই ধরণের অনাকাঙ্খিত শিশু মৃত্যু হ্রাস করবে।
নোটস:
Scientifically, it’s called ectogenesis, a term coined by J.B.S. Haldane in 1924. A hugely influential science popularizer, Haldane did for his generation what Carl Sagan did later in the century. He got people thinking and talking about the implications of science and technology on our civilization, and did not shy away from inventing new words in order to do so. Describing ectogenesis as pregnancy occurring in an artificial environment, from fertilization to birth, Haldane predicted that by 2074 this would account for more than 70 percent of human births.
তথ্যসূত্র:
- That Artificial Womb Video Isn’t Real, But Scientists Say It Could Be
- “EctoLife” artificial womb concept revealed
এক্টোলাইফ কী সম্ভব? /এক্টোলাইফ কী সম্ভব?