ডিস্ট্যান্স
তোমার কাছে এটা হয়তো তুচ্ছ নিস্প্রাণ এক পাথর কিন্তু আমার কাছে শেক্সপিয়রের সনেট।
কারণ এই পাথরেই ফসিল হয়ে আছে পদার্থবিদ্যার সূত্র, রিল্যাটিভিটি ও কোয়ান্টাম ফিজিক্স সবকিছু এখন এই মুহূর্তে এখানেই অস্তিত্বশীল।
আমি যখন তাকে হাতের মুঠোয় তুলে ধরি তখন ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিগুলিও আমার হাতের রেখায় পথ চলে!
এক লাফেই আমি পেড়িয়ে যেতে পারি দুটি গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী দূরত্ব!
ডায়মেনশনাল উইন্ডোজ প্রয়োজন নেই।হ্যাঁ আমি ক্ষুদ্র!
একটি লিচুর মধ্যে বসবাসরত ক্ষুদ্র একটি পেস্ট যেমন সেই ক্ষুদ্র লিচুকেই ইউনিভার্স ভেবে বিভ্রান্ত হয়,
তার জীবনের অর্থ হারিয়ে ফেলে,
আমিও তার মতোই একটি মহাজাগতিক পেস্ট ,
তুচ্ছ ও অবহেলিত,
এই সীমাহীনের মাঝে আমিও ম্লান,
মাঝেমাঝে আমিও তারতম্যহীন এই চেনাজানা গ্রহের ক্ষুদ্রতা দ্বারা বিভ্রান্ত হই!
কিন্তু আমি জানি ম্যাথিউসিলাহ নক্ষত্রে যে সত্য বাস করে একই সত্য বাস করে আমার চোখে এই মুহূর্তে প্রবেশমান একটি ফোটন কণায়।
তাই আমি তোমাদের এই নশ্বর অর্থহীনতায় আক্রান্ত নই, তোমাদের রোগ-শোক-দুঃখ- যন্ত্রণা অথবা যুদ্ধ কোনোকিছুই আমাকে অর্থহীন করে তুলতে পারে না।
তোমাদের জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য ঈশ্বর প্রয়োজন, অলৌকিকতা প্রয়োজন ,তোমাদের জন্য প্রয়োজন স্বর্গ অথবা নরক!
তোমরা সারাজীবন শুধু জীবনের অর্থ ও বিশেষত্ব অনুসন্ধান করছো কিন্তু তোমরা একটি পাথরের গভীরতা মেপে দেখনি।
তোমরা অজস্র কবিতা ও গান লিখেছ কিন্তু কখনো ব্যক্তিত্বহীন অস্তিত্বের গণিততত্ত্ব পড়ে দেখনি।
তুমি যা অনুসন্ধান করেছ, করছ ও করবে সবকিছু আমার হাতে লেখা ছিল।
তুমি চাইনিজ ভাষা বোঝো না, তাই তোমার কাছে সেটাকে অদ্ভুত কিছু প্যাচগোচ মনে হয় আর তোমার মনে হতে পারে বাংলা ভাষার অর্থ কাগজ থেকেই মাথায় ঢোকে!
তোমার চোখে অর্থ নেই কারণ তোমার চোখ বিভ্রান্ত।
তোমার অডিটরি স্নায়ু এই প্রকৃতির কাছ থেকে বিশেষ কোনো বার্তা পায় না কারণ তোমার কান বিভ্রান্ত আর এজন্য তুমি সপ্তমাকাশ থেকে ওহি প্রত্যাশা করো, তোমার কাছে ঈশ্বরের মেসেঞ্জার আসতে হয়!
তোমার সমস্ত দেহের প্রতিটি নার্ভ বিভ্রান্ত কারণ সমস্ত ইউনিভার্স তোমার দেহে জেগে ওঠার পরও তুমি জীবনের অর্থ খোঁজ কর!
তুমি এখানে দেখছ দেড় ইঞ্চি লম্বা একটি গাণিতিক সংকেত কিন্তু আমি দেখছি অ্যাটমের নিউক্লিয়াস থেকে শুরু করে মাল্টিভার্স্যের সল্যুশন।
তোমার কাছে এই সমীকরণ দেড় ইঞ্চি একটি অর্থহীন প্রলাপ।
আমার কাছে যিশুর লাস্ট সাফার নাইট,
তার হাতে পানপাত্র!
আমি ঈশ্বর সমীকরণ হাতে দাঁড়িয়ে আছি!
যিশু ধরে রেখেছে তার হাতে হলি গ্রেইল!এই পানপাত্র ধরে রেখেছে অজস্র সভ্যতার দিন-রাত্রি!
মিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন মা মেরির চোখের পানি!
যারা প্ল্যাংক শক্তির দেয়াল পেরিয়ে ছুঁইতে পারেনি তোমার সুখ- তোমার দুঃখ!
এই নিষ্কাম ও নিরপেক্ষ সমীকরণ ধরে রেখেছে সবকিছু এবং তোমার ভেলকনিতে বসে থাকা একটি ভিনাসফ্লাই!
তোমার এই মুহূর্ত ও মহাবিশ্বের শেষ মুহূর্ত,
তোমার ঘুম ছেঁড়া স্বপ্ন!
শব্দ,
তোমার দুই নিশ্বাসের দূরত্ব!
জীবন আর মৃত্যুর ফাটল!
কিন্তু সে কেবল জানে না তুমি আছো!
এ কবিতা বিমূর্ত নয়, এ এক স্পষ্ট কবিতা তাই তুমি চাইলে উপেক্ষা করতে পারো!
তুমি ভাবছো এটি ঈশ্বর সমীকরণ!
কিন্তু আমি দেখছি তোমায়।