Can't find our books? Click here!

ইনফার্নো কাব্য

একটি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কবিতা

আমার শার্ট ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে,

পেপার ম্যাগাজিনের জন্য রনবীরের মত টু-কোয়ার্টারও খুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে!


আমার ইউরেকা ইউরেকা বলে নাচতে ইচ্ছে করছে!


সমস্ত পৃথিবীর সামনে কিছু একটা খুলে দেখাতে ইচ্ছে করছে!


কিন্তু কী সেটা!

কি করি আমি ! কি করি!


তোমরা বল কবিতাকে বিমূর্ত হতে হয়।


শুন,


প্রতি সেকেন্ডে চল্লিশটি সুপারনোভা বিস্ফোরিত হচ্ছে!


দুইশত পঁচাত্তর মিলিয়ন তারা মরে প্রতি বছর!


দুই হাজার সাতশত ঊনচল্লিশ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়া মরে প্রতিদিন!


তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজ আমরা রাখিনি!


আমার একটা মাত্র মা ছিল!


তার প্রাণ ফানুসের মতো ভেঙে গেল!


৮ বিলিয়ন মানুষের অচেতন মনে তাকে দাফন করে এসেছি!


আর তুমি ৪৭ লাইট ইয়ার্স দূর থেকে আমার জন্য একটি আরিউলাস ফুল এনে বলছ, কবি হও!


তোমার কবিতাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।


কবিতা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরে আবদ্ধ থাকবে!

তার আপাদমস্তক আবৃত কর!

বাংলা একাডেমির কাছে ওহি এসেছে!

তোমার কবিতাকে সামাজিক হতে হবে!

বাস্তব হতে হবে!

তোমার কবিতা রিল্যাটিভিটির সূত্র মেনে চলবে!

প্ল্যাংক কনস্ট্যান্ট যেন খুবই ছোট হয়!

হুটহাট পৃথিবী থেকে শ্রডিঙ্গারের বেড়ালের মতো এই গ্রহ অথবা ঐ নক্ষত্রে ছুটে বেড়ানো যাবে না!

আমার বাবা নামাজের মসলায় উপুড় হয়ে পড়ে নিভে গেল!

আফ্রিকার জঙ্গলে আমার প্রেমিকার স্নায়ুতন্ত্র বসেছিল প্রাক্তনের পেনিসের উপর!

কারও ডোপামিনের উদ্দীপনা

আর কারও মৃত্যু!

তোমরা বল আমার কবিতার গায়ে পোশাক কোথায়?

কে ছিঁড়ে ফেলল কবিতার ব্রা!

প্রতি সেকেন্ডে ১৩০ মাইল বেগে ছায়াপথ ঘুরছে!

আমি কোথাও ঘুরতে পারিনি!

আর,

তোমরা বল,

কবিতার ব্রেস্ট ও ভ্যাজাইনা থাকতে নেই!

রাস্তার ছেলেরা টানাটানি করবে!

ছিঃ এত খোলামেলা লিখতে নেই!

আজেবাজে কবিতার পঙতিগুলোকে একদম জাহান্নামে সপ্তম স্তরে পুরে দেব!

মুনকার নাকিরের কাছে তোমার কবিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে!

প্রশ্নবিদ্ধ হবে ঈশ্বরের কাছে।

“কেন রে?”

“ঈশ্বর কি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ?

স্মরণ করো তিনটি প্রশ্নের কথা!

ব্রেস্ট,ভ্যাজাইনা ও হিপ

রক্তপাতের সময় নামাজ পড়তে নিষেধ কর!

স্মরণ কর,

বিচারদিনের কথা!

যেদিন এ মহাবিশ্বে কেউ থাকবে না,

শুধু এ কবিতা নগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকবে ঈশ্বরের চোখের উপর, সেদিন কোন কবিতার দেহে কাপড় থাকবে না!

“ঈশ্বর কোনদিকে তাকাবে?”

যখন আমি প্রশ্ন করি!”

তোমরা বল এ কবিতা মুনাফিক!

গাণিতিক সূত্রের মত কবিতারও নিয়ম আছে,

রাষ্ট্রের মতো শৃঙ্খলা আছে!

কিন্তু কবিতা যে পদার্থবিদ্যার সূত্রের মতো ব্যক্তিত্বহীন লম্পট হতে পারে,

পৃথিবীর দশ হাজার ধর্মের মতো প্রতারক হতে পারে!

লিয়া ও লিওনের মতো পর্নোস্টার হতে পারে!

কবিতা যে পারমাণবিক বোমা হতে পারে!

আলকায়দার মত খুনি হতে পারে!

তা তোমরা দেখনি!

কবিতা যদি বেপরোয়া ও নির্লজ্জ নারীর মত যেখানে সেখানে প্যান্টি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে !

কবিতা যদি শিম্পাঞ্জির মত নগ্ন হয়ে যায়!

খিলখিল করে হাসে!

তবে এটি একটি ব্যাশা কবিতা!

কবিতা হবে রবি ঠাকুরের, তুমি কি কেবল ছবি অথবা আমারও পরাণও যাহা যায়!

কবিতা হবে কাজী নজরুলের বিদ্রোহী অথবা জসিম উদ্দীনের দাদির কবর!

কবিতা হবে পাবলো নেরুদার তোমার পা!

কবিতা হবে জীবনানন্দের বনলতা!

মাইকেলের সনেট!

যে কবিতা প্রধানমন্ত্রীকে ইভটিজিং করে!

যে কবিতায় যুদ্ধ অথবা নেতার কথা নেই!

যে কবিতা ইমামকে মাস্টারবেট করতে বাধ্য করে!

যে কবিতা পড়লে সমাজে তোমার দুর্নাম হবে!

আবৃতিকারক ইতস্তত করবে!

তোমার নামে হাইকোর্টে সুপারিশ করার সাহস করতেও নাস্তিকতার অসম্মানবোধ করবে নাস্তিক!

যে কবিতাকে পুলিশ শীঘ্রই অ্যারেস্ট করবে!

কোনোপ্রকার শব্দ ছাড়াই

ক্রসফায়ার করবে!

ছুঁড়ে ফেলে দেবে যাকে দাও!

যে কবিতা সামাজ মানে না, যে কবিতার ক্ষতবিক্ষত হৃদয় তার যোনি ফাঁক করে বলে- আরও দিবি!

সে এক ব্যাশ্যা কবিতা!

তুমি একটা উন্মাদ কবি!

তুমি একটা নিষিদ্ধ পল্লি।

তোমার ব্রেন নিউরন নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত!

হ্যাঁ হ্যাঁ

আমি মৃত্যুর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি,

আমাকে শেষ করে দাও।

দুই হাজার সাতশত ঊনচল্লিশ কোয়াড্রিলিয়ন পিঁপড়া চোখে পড়ে তোমার!

কিন্তু আমাকে কেন এত উপেক্ষা!

আমার মৃত্যুর ব্যাপারে গাফেলতির জন্য আমি আজরাইলের ফাঁসি চাই!

মামলা করব আমি ঈশ্বরের নামে!

এ কথাগুলো বলার সাথেসাথেই আমার মৃত্যু হোক!

যদি মৃত্যু না হয় তবে তোমাদের ঈশ্বর থাকুক বা না থাকুক আমার কবিতা এমনই হবে!

আমার জীবন ছন্দহীন।

আমার দু-চোখ ঝাপসা।

আমার হৃদপিন্ডে ক্রুশবিদ্ধ যিশু!

আমার নিঃশ্বাস

আমার বিদ্রোহী নিশ্বাঃস!

আমার ভেঙে গেছে ডানা!

ডানাহীন এক পাখির কাছ থেকে একটি ভদ্র

কবিতা শোনার জন্য তোমার কবিমন আজ উত্তেজনা আর অস্থিরতার চূড়ান্তে!

শুন,

একটি পাখির ডানা ভেঙে গেলে সে আর

উড়তে পারে না।

তার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়।

ডানাহীন একটি পাখির মাথার উপর অসীম আকাশের নক্ষত্রও যদি আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে নীড়ে ফিরে যেতে পারে না, নক্ষত্রের বিপুল আলোয় তার মুক্তি নেই।

তুমি যদি তাকে ৪৭ লাইট ইয়ার্স দূরের কোনো নিকটবর্তী গ্রহ থেকে সবচেয়ে চারুত্বসম্পন্ন একটি ফুল এনেও উপহার দাও সে বেদনার্ত চোখে তাকিয়ে থাকবে।

কারণ তার সন্তানরা তার জন্য ক্ষুধার্ত অবস্থায় অপেক্ষা করছে, তার মুক্তি তোমার আকাশে নয়, তার মুক্তি নীড়ে।

সবাই বলে, তোমার মহাবিশ্ব অনেক বিশাল।

কিন্তু আমি দেখি এ মুহূর্তে একটি কোয়েসারও আমার নিশ্বাঃসে মিশে থাকা অক্সিজেন অণু থেকে বড় কিছু নয়।

স্বাধীনতা খুবই ক্ষুদ্র হতে পারে, আমরা অত্যন্ত ক্ষুদ্র কিছুর কাছে দায়বদ্ধ, অতি-ক্ষুদ্র অনু-পরমাণু দিয়ে আমরা গড়ে উঠি, খুব-ক্ষুদ্র ডিএনএ অণু থেকে আমাদের উৎপত্তি এবং ক্ষুদ্র কিছু কোষের ক্ষয়ের কারণে আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাই।

বার্ধক্য ও মৃত্যুকে আমরা স্বীকার করি না কিন্ত অজ্ঞতার বাবল একদিন ভেঙে যায়।

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য গ্রহ, তারা অথবা মহাশূন্যের দরকার নেই কারণ সেগুলো পনের বিলিয়ন বছর ধরেই চলমান।

তুমি আমাকে সুন্দর অ্যাপার্টমেন্ট, চেয়ার, টেবিল, বুক সেলফ, কম্পিউটার সবকিছুই দিয়েছ কিন্তু তুমি আমাকে পথ চলা অথবা চিন্তার স্বাধীনতা দাওনি।

তুমি আমার ডানা ভেঙে দিয়েছ।

জেনে রেখ, তুমি আমাকে কিছুই দাওনি, আমি এখন মৃত।

পুরো মহাবিশ্ব ঘুরে বেড়াতে পারলেই সেটাকে স্বাধীনতা বলে না, যে স্বাধীনতার সাথে স্বস্তির সম্পর্ক নেই সে স্বাধীনতায় আনন্দ নেই।

আমি কবিতা লিখতে ভালবাসি, আমাকে এক টুকরো কাগজ আর একটি কলম এনে দিলেই তো পারতে!

আমাকে আমার মতো যদি থাকতে নাই দাও, যদি আমার প্রতিটি সেকেন্ড, অন্য কারও দেখানো মানচিত্র অনুসরণ করে,

যদি আমার জন্য এক অণু স্থানও না থাকে কোথাও, তাহলে এত অবারিত স্প্যাস-টাইম ও ম্যাটার অপচয় করে আমার ক্ষুদ্র মনে বিশালত্বের অনুভূতি জাগিয়ে বিভ্রান্ত করার কি প্রয়োজন ছিল?

বুদ্ধ

এসেছ?

হে ভীন্ন গ্রহ মানবী?

ও মুখ খুলতে হবে না!

তোমার মনকে জানতে যদি আমার ডায়মেনশনাল উইন্ডোজ খুলতে হয় !

যদি শুনতে হয়!

তবে জেনে রেখ এ গ্রহ ভালোবাসতে জানে না !

আমার রক্তস্রোত তোমার অডিসি!

তোমার হৃদপিণ্ডের প্রতি কম্পনে জেগে ওঠা কবিতা

আমার নিঃশ্বাস!

তোমার পায়ের পাতায় জমে থাকা শিশির আমার স্বপ্ন?

তোমার হাতের রেখা,

সেখানে ফুটে ওঠা মানচিত্র,

দুর্বোধ্য লেখা,

আমি পড়েছি।

আমি এ গ্রহের সন্তান, পৃথিবীর অতি-ক্ষুদ্র এক বিন্দুতে, অজস্র বিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্রের মাঝে ভির্গো সুপার ক্লাস্টারের তুচ্ছ একটি গ্রহে,

মহাবিশ্বের অতি-ক্ষুদ্র একটি সেলে আমার বসবাস!

কিন্তু আমি বিভ্রান্ত নই!

আপেলের ভেতর বেড়ে ওঠা একটি নগন্য ব্যাক্টেরিয়ার মত আমি কয়েক ইঞ্চি স্থানকে অসীম মহাবিশ্ব ভেবে বিভ্রান্ত হলেও মহাবিশ্ব আমার বাহিরে নয়!

সত্য আমার থেকে শূন্য কিলোমিটার দূরত্বে!

তোমার হাতের রেখা অনুসরণ করে আমি এক গ্রহ থেকে লাফ দিয়ে আর এক গ্রহে চলে যেতে পারি,

তোমার চোখের দৃষ্টিকে অনুসরণ করে আমি আন্তঃ গ্যালাক্টিক শূন্যতার সকল আধার মুছে দিতে পারি,

তোমার ঠোঁটের ভেজা জল দিয়ে তৃষা নিবারণ করতে আমি ল্যাবরেটরিতে তৈরি করতে পারি আর একটি শিশু মহাবিশ্ব!

তোমাকে নিয়ে আমি পাঁচ বিলিয়ন বছর সামনে গিয়ে,

এ মহাবিশ্বের প্রতিটি অনু-পরমাণুকে সঙ্গে করে,

সহসা অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি সাব-অ্যাটমিক কণিকাদের মত,

কোয়ান্টাম ট্র্যানজিশন সেদিন আমার পক্ষ নেবে!

তারপর নতুন এক মহাবিশ্বে উদিত হতে পারি আমরা অ্যাডাম ও ইভের মত।

তোমার ডিএনএ থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারি নতুন এক সভ্যতা!

আমায় তুমি চেন?

এ আমার পৃথিবী,

আমি ঢাকার রাজপথের সন্তান,

এ শহরের প্রতিটি অলিগলি

আর নেকড়ের উত্তরসূরিরা জানে, তোমার জন্য আমার কি অসীম ভালোবাসা!

এখানে এ গ্রহে আছে

চন্দ্র,

জোয়ার-ভাটা,

আজও আছে

শীত, গ্রীষ্ম,শরত, হেমন্ত ও বসন্ত

কৃত্রিমভাবে তৈরি করা প্রতি বসন্তে আমি একবার নিরক্ষরেখায় দাঁড়িয়ে চোখ তুলি অসীম আকাশ পানে তোমাকে দেখব বলে!

আমি স্থান-কালের বিশালত্ব দ্বারা বিভ্রান্ত এক আপেল মানব!

আজ এতদিন পর ,

তুমি এলে অথচ?

আমি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত, অনড়!

আমি তোমাকে কাছে পেয়েও আজ নড়তে পারছি না একটুও!

পনের বিলিয়ন বছর পথ পাড়ি দিয়ে আমি আজ ক্লান্ত

অসহায়,

আমার চুম্বনহীন মুখে এখন আর আফসোস নেই!

অমর জিন পেয়েছি আমি, হাজার হাজার বছর বেঁচে আছি!

তুমি আসবে বলে,

আমি জমিয়েছি খ্রিষ্ঠাব্দের পর খ্রিষ্ঠাব্দ বিন্দু বিন্দু অনুভূতি

কিন্তু সহসা সব উবে গেছে!

আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই!

ইউনিভার্সের এই ক্ষুদ্র সেলে শুয়ে আছি আমি ,

ভিনাসফ্লাই ট্র্যাপে আটকে আছে কিছু পতঙ্গ, আমি তোমার চেয়েও আজ তাদের জন্য বেশি মর্মাহত!

এক বর্গফুট একটি জানলার ভেতর মহাকাশ এসেছে আমার ঘরে,

সেই আলোর রেখা ধরে,

তুমি এলে, আষাড়ের স্বপ্নের মত!

আমার হাতের বাহুতে জমে থাকা ক্ষুদ্র কিছু পরমাণুর সাথে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি ৪০ লাইট ইয়ার্স দূরের এক বাইন্যারি স্টার সিস্টেমের কথা!

আমার হাতের মুঠোয় মাধ্যাকর্ষ আছে,

আছে থার্মোডায়নামিক্স

কোয়ান্টাম ফিজিক্স

স্ট্রিং-এর ভাইব্রেশন!

তোমাকে জানার জন্য এ গ্রহ ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে প্রবেশ করার প্রয়োজন হয়নি আমার!

আমার হাতের মুঠোয় আমি ধরে রেখেছি দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির ফিজিক্স, একমাত্র সত্য!

তোমাকে দেখার জন্য আমার কোনো ডায়মেনশনাল উইন্ডোজ খোলার প্রয়োজন হয় না!

ব্যক্তি প্রেম আজ পরিণত হলো বিশ্বপ্রেমে!

তুমি আমাকে এত বেশি ভালোবাসা দিয়েছ যে, আমি ফানুসের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছি!

আমার এখন ভিনাস ফ্ল্যাই ট্র্যাপে আটকে থাকা পতঙ্গগুলোকেও তুমি মনে হয়!

আজ সমস্ত বিশ্ব এক যোগে আমার ভালোবাসা মেনে নিয়েছে!

আমাকে যে পদার্থবিদ্যার সূত্র শাসন করে,

তোমার উপরও একই ল্যা অব ফিজিক্সের অধিকার!

তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমার হাতের মুঠো খুলতে হয় না!

আমি আর তুমি এতই কাছাকাছি!

তাই তোমার এখানে আসাটা স্বাভাবিক!

আমি তোমার থেকে কোনদিন দূরে ছিলাম না বলে আজও কাছে যাইনি!

তোমার তন্দ্রাচ্ছন্ন চুল!

তোমার পায়ে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশির!

তোমার নিস্তব্ধ যোনি,

আর বিস্মিত চোখ!

তোমার শব্দ, স্বপ্ন ও স্মৃতি কোনোকিছুই আমি জাগাতে চাইনি!

ওরা ঘুমিয়ে থাকুক।

ওয়ার্প


স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার মতো

 ভেঙে গেলে তুমিও।

জোড়া দিতে পারিনি তোমার খণ্ড খণ্ড স্মৃতি 

ঈশ্বর সমীকরণ ভেঙে যাওয়ার পর মৌলিক বলগুলো যেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে,তুমিও বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছো আমার চেতনায়।

চেননি, জাননি, বুঝোনি

শুধু নিভিয়ে দিয়েছ আমার স্মৃতির প্রদীপ!

 নিউট্রনো কণার মতো এসেছিল, তারপর চলে গেলে আড়ালে, আলো ও আধারের অন্তরালে, আমি শুধু পথ চলেছি একা

আকাশ প্রদীপ জ্বালিয়ে!

সমস্ত মহাকাশ আমার মাথার ছাতা হয়ে ছিল।

মিলিয়ন মিলিয়ন নক্ষত্রের আলো বাড়িয়েছিল সাহায্যের হাত  !

ব্ল্যাকহোলগুলো প্রবল শক্তিতে মহাশূন্যকে টেনেছিল, 

পায়নি !

 আমার মহাজাগতিক বন্ধুরা কেউ তোমার নির্লিপ্ত হৃদয়ের নাগাল!

শুধু  নিরাকার অনুভূতি তুমি

 তুমি নেই!

পৃথিবীর কোনো কবিতা ও উপন্যাস পায়নি আজও তোমার সন্ধান!

ইলিয়াম ও অডিসি তোমায় দেখেনি।

বাইবেল তোমায় জানে না।

বেদ তোমার বর্ণনা দিতে ব্যার্থ হয়।

যিশু তোমার জন্য ক্রুশবিদ্ধ হয় বার বার!

সক্রেটিস পান করে হ্যামলক !

কোরানের ঈশ্বর চেতনার সপ্তমাকাশ নিয়ে একা

তার হেরাগুহায় ধ্যান! 

তোমার বিরহে!

এসেছিল যুগে যুগে মহানবী ও বিশ্বদূত!

পৃথিবীর সব অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য শুধু তোমার ঐ অবাধ্য নিষ্ঠুর হাসি দায়ী ছিল।

ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়েছিল,

তুমি আসবে বলে!

তোমার লাল টিপ

যেন নেমেসিস

তুমি যেন মহাবিলুপ্তির কোনো সংকেত

শুধু ফেঁসে গেছি আমি,  

কেন মৃত্যু হয়নি আমার।

জীবন যেন এক দূরারোগ্য রোগ

এ আমার অদ্ভুত এক শোক।

আমি পৃথিবীর ১০,০০০ ধর্ম অনুসন্ধান করেছি, কোনো ধর্মগ্রন্থ অথবা লোকগাথা  তোমার সন্ধান দিতে পারেনি।

তুমি কোথা থেকে এসেছ?

রেইন ফরেস্টের গভীর  থেকে?

আফ্রিকার সাভানা থেকে?

 

আটলান্টিক অথবা বাল্টিক কারও কাছে তোমার ফসিল নেই!

তুমি  সময়ের অতীত অথবা ভবিষ্যৎ ?

তুমি কোন বিশ্বে নৃত্যরত?

কোন গ্যালাক্সি থেকে এসে স্বপ্নে দেখা দাও?

তোমার জন্য আমি আর কত বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করব?

আবার বৃষ্টি নামবে,

শহরের প্রতিটি বেলকনিতে জমবে তরুণীর দু-চোখের স্বপ্ন।

দূরে বহু দূরে উড়ে উড়ে বিলিন হবে অচেনা দুটি ডানা,

তরুণীর যোনি থেকে গড়িয়ে পড়বে ঋতুচক্রের রক্ত

 আঙুলে যৌনতা মেখে সে তাকিয়ে থাকবে অপলক!

ওকি রক্ত নাকি শাশ্বত!

দেখবে স্পিনোজার চোখ!

আমার দু-চোখ ঝাপসা হয়ে উঠবে ডেস্কে বসে থাকা আইনস্টাইনের মতো।

সমস্ত পৃথিবী ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে মিশে যাবে ঘুমে

তারপর আমি দেখব, তোমাকে।

১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পাড়ি দিয়ে তুমি দেখতে এসেছ আমায়?

না!

না!

সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

তোমাকে স্বপ্নে পাওয়ার স্বপ্ন আমার পূরণ হওয়ার নয়।

এক  টুকরো কাগজের পাতার মতো

 যদি মহাকাশকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কুচকে ফেলা যেত! 

তবে মিলিয়ন মিলিয়ন আলোকবর্ষ বিস্তৃত ছায়াপথের  স্থান-কাল  মুচড়ে দিয়ে আমি টেনে নিয়ে আসতাম একটি পরমাণু সমান দূরত্বে।

আর আমি সেই পরমাণুর আড়াল থেকে খুঁজে দেখতাম তোমাকে!

চুম্বন এঁকে দিতাম অ্যাটমিক স্কেলে!

তুমি কী সত্যিই এখানে আছো?

নাকি তুমি আমার মস্তিষ্কের ঝড়!

হ্যাঁ!

তুমি আমার স্বপ্নের মানবী!

এলোচুল

অগোছালো শব্দ!

ঝড়ো হাওয়া!

তারপর বিস্মৃতি!

তাই তোমাকে কেন্দ্র করে আমার চিন্তাগুলোও স্বপ্নের মতোই অযৌক্তিক।

এখানে কোনো নিয়ম নেই,

এখানে নেই কোনো ধর্ম অথবা সমাজ।

তোমাকে ঘিরে আমার চিন্তাগুলো অসামাজিক!!

অনাথ


যখন দেখি আর কথা নেই,

সব কথা ফুরিয়ে গেছে তখন ব্যথা লাগে, নিজেকে নীল তিমির মতো ভারী ভারী লাগে!

চোখে অশ্রু নেই,

চোখ আমার হিমালয়ের বরফ,

তাতে কোনো ভাবনা নেই!

আমার ভেতরের সৃজনশীল সত্তা যখন কোকেইন অথবা অ্যালকোহল আসক্তদের  মতো হেলেদুলে পড়ে যায়,  কুচকে যাই আমি!

যখন আমি আমার ভেতরের লাগামহীন অবাধ্য কুকুরটির আর ঘুম ভাঙাতে পারি না,

 খুব দুঃখ হয়!

আমি কার জন্য গান গাইব, কার জন্য সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্রদের সাথে এক তালে নেচে উঠব, কার জন্য আমি উদাসীন ও উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াব ? ঢাকার প্রতিটি পথে পথে, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি আর হসপিটালের আশেপাশে, প্রতিটি চা-স্টল, লেক, থিয়েটার অথবা জাদুঘর, শহরের গোপন, অতি-গোপন বুক পকেটে, প্রতি সন্ধ্যায় আমি কার জন্য দাঁড়িয়ে থাকব কৃষ্ণচূড়ার নিচে  একা?

আমি কেন বেঁচে আছি?

তারা’রা কথা না বলেই বিলিয়ন বিলিয়ন বছর জ্বলছে,

সাভানার তৃণলতা ও ফুল শব্দ করেনি পূর্বসূরিদের পায়ের আঁচরে,

তার বুকে সংঘটিত হয়েছিল মেজেন্টারিয়ান আর হোমোথোরিয়ানদের রক্তাত্ব সব যুদ্ধ!

অ্যামাজনে প্রতি সপ্তাহে নতুন কোনো প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়,

তার আগে তাদের সুখ অথবা দুঃখ সবই তারতম্যহীন,

আমি তোমার এক অনাবিষ্কৃত স্যাপিয়েন্স।

আমি সেই ফুল যে কখনো পূজার থালায় ওঠেনি

আমি মর্মাহত!

তারার আলোয় মহাবিশ্ব আলোকিত হয়,

সে আলোর নিচে ভিজে ভিজে এত বছর অতিক্রান্ত হলো তবু  আমি বুঝতে পারি না,’

চুপ করে থেকেও কেমন করে মহাকাশের অজস্র গ্রহকে আলোয় ভাসিয়ে দেয়া যায়, প্রাণ সঞ্চার করা যায়!

চার বিলিয়ন বছর ধরে সূর্যের আলোর নিচে এ পৃথিবী অতিক্রম করেছে অজস্র যুগ,

সাইডারিয়ান, কেমব্রিয়ান অথবা জুরাসিক

প্রতি ২৬ মিলিয়ন বছর পরপর নেমেসিস ও গ্রহাণুর আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছিল পৃথিবী,

ক্রেটেশিয়াস যুগে সূর্য দেখেছে ডায়নোসরদের মহান বিলুপ্তি,

এত এত বড় মন,

তাদের বিরাট শাসন!

এ সবকিছু বিবর্তিত হয়েছিল, এ সূর্যের নিচে, এ তারকার আলোয়,

এ সূর্যের নিচে বিবর্তিত হয়েছিল

৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে আর্ডির মনে ভালোবাসা!

এত এত বিলুপ্তির পরও সূর্য ও আকাশের নক্ষত্ররা নিস্তব্দ নিশ্চুপ ছিল,

ফিজিক্সের সূত্র ছিল দার্শনিক,

তার নিরবতার মাঝে পথ চলেছিল মহাকাশ গ্রহ-নক্ষত্রের শাখা ও প্রশাখা বিস্তার করে, জন্ম দিয়েছিল অজানা অনেক সভ্যতা যারা মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্ব দ্বারা বিচ্ছিন্ন!

কেবল, আমি নিস্তব্ধ থাকতে পারছি না!

শুধু আমি চিৎকার করতে পারছি না!

ও আমার অজানা ভালবাসা!

আমার প্রেম!

তুমি কোথায় লুকিয়ে আছ?

এত আলো মহাবিশ্বে, এত ফোটন, তবু তুমি সকল আলোর অন্তরালে, কেন হারালে !

আমি ভালোবাসার নিউক্লিড অ্যাসিড

অপেক্ষা করছি আজ ২৯ বছর,

সেই শ্যামলা মুখ,

ঐ এলোমেলো চুল,

ডাগর চোখের আধ্যাত্মিকতা,

আমায় নাস্তিক করে দেয়,

যদি তোমার বুকে আমি ঠাই নাই পাই,

এসবকিছু,

তবে ব্যর্থ,

ব্যর্থ কেমব্রিয়ান, ব্যর্থ ডেভোনিয়ান, ব্যর্থ কার্বনিফেরাস বৃক্ষের পাতা!

আমি মানি না! আমি মানি না!

হে মহাকাশ!

তুমি চুপচাপ!

তুমি বিরাট!

১০ বিলিয়ন লাইট ইয়ার্স দূরে অজস্র গ্যালাক্সি ছেড়ে গেছে তোমায়, তোমার চোখে অশ্রু নেই।

কত নক্ষত্রের উদয় হলো, কত নক্ষত্রকে গিলে খেল ব্ল্যাকহোল

অথচ

তুমি নির্লিপ্ত,

তারতম্যহীন!

আমি নীল শাড়ী পরা ঐ এলোকেশীর জন্য!

তার রক্তাত্ব চওড়া পিঠে অন্ধকার পশমের নেশায়! 

ভরাট নিতম্ব আর সুক্ষ্ম ঠোঁটের রেখায়,

যে অসীমের সন্ধান চেয়েছিলাম,

পাইনি!

আমি ব্যর্থ, আমি ব্যর্থ হয়েছি পথে পথে,

আমি আলোহীন এক গ্রহ !

আমি অন্ধকার!

আমার ভেতরের অবাধ্য  কুকুরটি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে,

আমার বিজ্ঞান ও দার্শনিকতা নীলক্ষেতে স্বস্তা ধরে বিক্রি হচ্ছে রাস্তার ধারে!

আমি এক বস্তু,

আমি শুধু বস্তু,

আমি জন্ম নিয়েছি, বৃক্ষের মত বেড়ে উঠেছি, রেডউডের মত সূর্যের দিকে বিস্তার করেছি শাখা ও প্রশাখা  কেবল শুকিয়ে যাব বলে,

শূন্যতা প্রণাম তোমায়,

তোমার জয় হয়েছে,

হেরে গেছি আমি,

এক সন্ধ্যায়,

সে হেঁটে যাবে,

তার চোখে জ্যোতির্বিদ্যা,

তার চলায় মহাজাগতিকতা,

তার স্মিত হাসি,

তোমায় ভালবাসি বলে, হে পদার্থবিদ্যা!

পৃথিবীর কোনো মানবী আমাকে ভালবাসেনি, ভালোবাসেনি আমার অন্তহীন  নিরবতা, আমার ধ্যান, আমার সরলতা  ও  হাসির আড়ালে ফসিল হয়ে জমে থাকা কান্না !

%d bloggers like this: