ছেলেটার নাম অভিষেক। ফেনী পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর একজন ছাত্র। হাইপারস্পেসের অভি রায় কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার পর তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্র। কারণ এ অল্প বয়সেই তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিলেটিভিটির গভীরতর বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত; এ ব্যাপারটি আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল, দশম শ্রেণীর একজন ছাত্র কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিলেটিভিটিকে সমন্বয় করতে চায়। আমি তাঁর গাণিতিক ট্যালেন্ট দেখে বিস্মিত ও নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। “স্ট্রিং তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন” শিরোনামে একটি আর্টিকেল ইমেইল করার পর আমি সর্বপ্রথম তাঁর ছবি ও স্কুলের ঠিকানা দেখতে পাই! কিছুক্ষণ তাঁর আর্টিকেল আর কিছুক্ষণ তাঁর ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি! আমি অনেক বেশি আবেগগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলাম এজন্য যে, যে জেলায় আমি জন্মেছি সে জেলায় জন্ম নিয়েছে এক অপরিচিত নক্ষত্র! আমি নিশ্চিত হয়ে উঠেছিলাম, অভি একদিন বিশ্ববিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী হবেন! কারণ তাঁর সাথে আমি যতদিন মেসেঞ্জারে কথা বলেছি ততদিনই সে কোনো না কোনো গাণিতিক সমস্যা, কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা নিয়ে তাঁর ভাবনা, জেনারেল রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সমন্বয়, রিসার্চ পেপার প্রকাশ ইত্যাদি সংক্রান্ত আলোচনা করেছিলেন। এত অল্প বয়সে তার জ্ঞানের চাহিদা এতটাই ব্যাপক যে, আমার মনে হয়নি আমার পক্ষে তার তৃষ্ণা নিবারণ করা সম্ভব! তার চিন্তাভাবনা সময়ের ঊর্ধ্বে! তাঁর জন্য প্রয়োজন শন ক্যারল অথবা মিচিও কাকুর মত শিক্ষক।
এক সপ্তাহ পূর্বে আমার পিতাকে দেখতে ফেনীতে যাই কিছুদিনের জন্য। আকস্মিক দেখা হয়, অভিষেকের মামার সাথে। তাঁর মামাও আমাদের গ্রুপের একজন সদস্য। কিন্তু আমি তাঁর সাথে অভির আত্মীয়তার কথা জানতাম না। তাঁর মামা আমাকে বলেন, অন্যান্য শিশুরা যখন নিছক খেলাধুলায় মগ্ন থাকত, অভিষেক তখন কোডিং নিয়ে কাজ করতো, যেখানে তার বয়সী শিশুরা বিভিন্ন তুচ্ছ গান বাজনা নিয়ে সময় অপচয় করে, সেখানে অভিষেক শুনতো উচ্চমাত্রিক ক্লাসিক্যাল মিউজিক। এত অল্প বয়সে তার মধ্যে এমন গভীরতা কীভাবে জন্ম হয়েছে সেটাও আমার গবেষণার বিষয়।
প্রথম আলোচনার সময় অভিষেক আমাকে বলেছিলেন, তিনি আমার বয়সে অনেক ছোট আমি যেন তাঁকে তুমি করে বলি। কিন্তু কেন যেন তাঁকে শুধু শ্রদ্ধা করতেই ভালো লাগে। আমার ব্রেন তাঁর উচ্চতাকে বয়স দ্বারা সীমাবদ্ধ করতে পারেনি।
যাই হোক। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা অভি কনটেস্ট আয়োজন করেছিলাম বিজ্ঞানমনস্ক, সৃজনশীল ও বুদ্ধিমান মস্তিষ্কগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য! কিন্তু আমার কেন যেন মনে হলো অভিই নব যুগের অভিজিৎ রায়! অভিজিৎ আবার জন্মগ্রহণ করেছে আর এক অভির মস্তিষ্কের নিউরনে! এটা ছিল আমার জন্য একটা সারপ্রাইজ!
হাইপারস্পেসের এডমিনদের সর্বসম্মতিক্রমে ফেব্রুয়ারিতে হাইপারস্পেস আয়োজিত অভিজিৎ রায় কনটেস্ট ২০২২- এ প্রথম স্থান অধিকার করেছেন আমাদের গর্ব Avishek Dutta। তিনি স্ট্রিং থিয়োরি এবং আলো ও আপেক্ষিকতার উপর জ্ঞানগর্ভ দুটি আর্টিকেল উপস্থাপন করেছিলেন( যদিও গাণিতিক জটিলতায় যাওয়ার জন্য সবাইকে নিষেধ করা হয়েছিল) ।
ধন্যবাদ অভিষেক মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের এ অসীম ক্ষেত্রে নিজেকে এত অল্প বয়সে যুক্ত করার জন্য। অভিনন্দন হাইপারস্পেসের পক্ষ থেকে অভি রায় অ্যাওয়ার্ড ২০২২ অর্জন করার জন্য।
আর্টিকেল লিংকঃ
১) আলোর গতি ও আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব
২) স্ট্রিং তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন